দেখ তো কি করছে? কোনো সাড়াশব্দ নেই কেন?
সে ততক্ষণে সারাটা রাস্তা ধুয়ে পাউডার মাখিয়ে ফেলেছে।
একি করেছিস?
আরে… ও তো স্নান করল…পাউডার মাখল…
কিন্তু কেন?
ওর মা বলল তো।
ওর মা কে?
সে আঙুল তুলে বড় রাস্তার দিকে দেখালো।
কিন্তু লোকে তো পা পিছলে পড়বে রে…
এখন কেউ আসবে না। আমি পাহারা দিচ্ছি।
আর বইখাতাগুলো?
তুলে আনব পরে। ওগুলো তো ছাদে ধুয়ে শুকাতে দিয়েছি। সাবান দিয়েছি, শ্যাম্পু দিয়েছি। ওই দেখো ছাদে দড়িতে মেলা!
আর কি কি করেছিস?
আর কিচ্ছু না তো। এত কাজ সকাল থেকে করা যায়?
বেলায় তার ধুম জ্বর এলো। সবাই বকাবকি করল, একটুও খেয়াল রাখো না মেয়ের। জানোই তো এত দুষ্টু। গোটা নতুন পাউডার, এত এত সাবান, শ্যাম্পু। হল তো বাজে খরচ? কে দেবে? তোমার বাবা?
অনেক রাত। সবাই ঘুমাচ্ছে। মেয়ের মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে।
সরু রাস্তাটা এসে দাঁড়ালো জানলার কাছে। তার পিছনে বড় রাস্তাটা। জানলার গারদ ধরে বইখাতাগুলো এসে দাঁড়ালো। সবাই জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছে গো ও?
মা বলল, জ্বরটা নামেনি গো। নেমে যাবে ডাক্তার বলেছেন।
বড় রাস্তা বলল, সবাই খুব কথা শুনিয়েছে, না গো? তাই হয়। যে করে সেই কথা শোনে। তুমি শুনেছ তো কত। আমিও শুনেছি। শুনি আজও। যে করে সেই কথা শোনে।
সকাল হল। তুমুল বৃষ্টি নামল। তাদের মোটর সাইকেল ভিজল, জুতোগুলো ভিজল, বাইরে ভুল করে ফেলে আসা দরকারি কাগজগুলো, যা মোটর সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝোলানো ছিল, সব ভিজল।
আজ কাজে বেরোনোর কথা। হল না। বাড়ির উপার্জনকারী পুরুষেরা গেল ভীষণ রেগে। রাগ যত চড়ল, ঘরে ধোঁয়া তত উড়ল। বিড়ি, সিগারেট। এত ক্ষতি, এত ক্ষতি। কে দেবে টাকা?
মেয়েটার জ্বর নেমেছে। সে জিজ্ঞাসা করল, বাবা কি খুব রেগে?
মা বলল, তোমার উপর না। বৃষ্টির উপর।
মেয়ে বলল, এই কথা? আচ্ছা। আমি বৃষ্টিকে বলে দিচ্ছি।
মেয়ে বলে দিল। বৃষ্টি ধরে গেল বেলায়। সবাই কাজে গেল।
মেয়েটা বলল, বাবা আমাকে কি থ্যাংকু বলেছে?
মা বলল, বলেছে তো।
রান্নাঘরের বাইরে বড় রাস্তা এসে দাঁড়ালো। বলল, কেউ বলে না বল। শিখে যাবে মেয়েটা। বড় হোক।
মা গরম তেলে বাটা ডালের গোলা ছেড়ে বলল, হ্যাঁ দিদি।
তেলটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।