প্রদীপের শিখা। নিভিয়ে দেব কি? সবটা পুড়লে তেলের খরচ বাড়ে। যদি নিভিয়ে দিই অমঙ্গল হয় বলে লোকে। তবে?
নিভিয়ে দিয়ে অমঙ্গলের জন্যেই বসে থাকি চলো। তবু কিছু তো হবে।
ঠাকুর অন্ধকারে গেল। তারারা আকাশ জুড়ে উঠল। বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা উঠানে বসে। অমঙ্গলের অপেক্ষায়। আজ দীপাবলি। আকাশে বাজির পর বাজি। চারদিক আলোয় আলো। বাচ্চাদের চীৎকার।
বৃদ্ধ গুনগুন করে গান গাইছে। শ্যামা মা কি আমার কালো রে...
বৃদ্ধা বলল, কালো রূপে দিগম্বরী, হৃদিপদ্ম করে মোর আলো রে...
বৃদ্ধ বলল, কালো রূপে আলো তো হয় গো তবে। আমায় ছুঁয়ে থাকো। অন্ধকারে ছুঁয়ে থাকাটাই আলো।
বৃদ্ধা ছুঁলো। বৃদ্ধের গালের কাছে মাথা নিয়ে এলো। গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, অন্ধকারে ভালোবাসাও তো আলো।
অমঙ্গল আসবে। আকাশ থেকে নামবে? না মাটি ফুঁড়ে উঠবে? নাকি সামনের ভাঙা বেড়া টপকে আসবে?
বৃদ্ধা বলল, আসুক। বাড়িতে আর কিছু না থাকুক, জল বাতাসা তো আছে। আসন পেতে দেব, তাই বসে খাবেখন। লক্ষ্মী তো এলো না। অলক্ষ্মীকে নিয়েই তো আমাদের সংসার, তাই না? ভয় কি?
ঠাকুরঘরে টুং করে আওয়াজ হল। বৃদ্ধা বলল, ইঁদুর। বৃদ্ধ বলল, আরশোলা। বৃদ্ধ বলল, ভূত। বৃদ্ধা বলল, দেবতা।
দু’জনেই হেসে উঠল। অমনি সামনের ঝোপেঝাড়ে জোনাকি জ্বলে উঠল শয়ে শয়ে। বৃদ্ধ বলল, আজ রাতে কি রাঁধবে?
বৃদ্ধা বলল, পোলাও, আলুকপির তারকারি, দই আর মিষ্টি তো আছেই। আর খানকতক লুচি আর সুজি।
বৃদ্ধ বলল, থাক। আজ আর তোমার রেঁধে কাজ নেই। চলো শিবতলায় খিচুড়ি দেবে, যাই।
দু’জনে দুই বাটি খিচুড়ি নিয়ে বসল। শিবতলার এক বাড়ির বারান্দায়। একজন দরজাটা খুলে বলল, কিগো তোমরা ময়লা পরিষ্কার করার বুড়ো-বুড়ি না? বারান্দায় বসেছ কেন? নামো নামো।
বৃদ্ধা বলল, মা খেয়ে নিয়ে নামি?
বাড়িওয়ালি বলল, মুছে দিয়ে যেও তবে।
বৃদ্ধ বৃদ্ধা নেমেছে। বৃদ্ধ বলল, দাঁড়াও, আমি মুছে দিচ্ছি।
দু’জনে মিলে মুছল।
ফেরার সময় বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে বলল, হ্যাঁ গো পরিষ্কার করে মুছেছ তো… নইলে আবার যদি ওদের অমঙ্গল হয়।
বৃদ্ধা বলল, হ্যাঁ গো। একদানাও চাল নেই। ওদের অমঙ্গল হতে দেব কেন? ওদের তো কেউ ছুঁয়ে থাকারও নেই। দেখলে না, কেমন রাগ? না গো?
বৃদ্ধ বৃদ্ধার হাতটা ধরে বলল, হ্যাঁ তো।