সৌরভ ভট্টাচার্য
13 February 2020
আজ চুমু খাওয়ার দিন। আহা, সেই সব দিনের কথা মনে পড়ছে। মামুর কাছ থেকে একটা চুমু পাওয়ার জন্য কতই না ঘুষের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। মামু গুড়গুড় করে এ ঘর সে ঘর করছে, আমি আর Aditya পিছন পিছন ঘুরছি, "মামু একটা চুমু দে.... প্লিজ... মামু"। মামুর পাত্তা পাওয়া ভার। ক্রমে ঘুষের লিস্ট বড় হতে শুরু করল, ক্যাডবেরি, লেজ, নানা প্রকার লজেন্স, মিষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে গিয়ে একটা চুমু পাওয়া যেত। ভয়ানক মাগ্যি তখন। আমি একটা গানও বেঁধেছিলাম, "মামুকে খাব চুমু..."। তা সে "চুমু" শব্দের সুরটা মুদারার পঞ্চম হয়ে তার সপ্তকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ আর কি। সেই সুরের দাপটেও মামু কখনও বিরক্ত হয়ে চুমু দিয়ে দিত। মাঝে মাঝেই বকা খেতে হত...বিওক্তো কয়িস না তো....
এই গেল বড় মামুর উপাখ্যান।
ছোটো মামু অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ। সে যদি না চায় চুমু দিতে তো সমস্ত পৃথিবীর ধনরত্নর লোভ তুচ্ছ তার কাছে। একবার স্থির হল রাতে একটা চুমু বরাদ্দ হতে পারে শোয়ার আগে। সেই কথা মত একটা পেয়েছি। কিন্তু লোভের বশে যেই আরেকটা চাইতে গাল বাড়িয়েছি, তিনি সরাসরি দরজার দিকে আঙুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, এখন আর না, আবার কাল, যা শুতে যা। তাই গেলাম।
বর্তমানে চুমুর দিকে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে আদিত্যর কন্যের দিকে। তিনি আবার মর্জি অনুযায়ী চলেন। যদি আপনার কপাল ভালো থাকল একটার জায়গায় দুটো পেলেও পাওয়া যেতে পারে। তবে তেনার একটা নীতি আছে। তিনি শিশুদের ক্যাডবেরি, লাড্ডু, চিপস ইত্যাদি বড়দের দেওয়াকে নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করে থাকেন। কারণ প্রতিটা শিশুই তা ডিজার্ভ করে বলে ওনার বিশ্বাস। তাই এইসব দিয়ে চুমু প্রত্যাশী হওয়ার চেষ্টাও করা যাবে না। তিনি আপনার আনা লাড্ডু চিবোতে চিবোতে বলে দেবেন, রাস্তা দেখো, ওসব খাইয়ে দাইয়ে চুমুটুমু পাওয়ার চেষ্টা মোটেও করা যাবে না। অগত্যা ওসব ধান্দা ছাড়ুন। আর মন হলে বিনা আয়াসেই আপনি খানকতক চুমু এমনিই পাবেন সে কথা আর আগেই বলেছি।
আরেকটা চুমুর গল্প দিয়ে আমার উপাখ্যান শেষ করি। আমার এক পিসির মেয়ে। সে ফেসবুকেই আছে, উল্লেখ করলাম না আর তাকে। নিদারুণ সুন্দরী তিনি আজ। তিনি যখন নিতান্তই শিশু একবার ক্রন্দন জুড়েছিলেন আমাদের কাঁচরাপাড়া কোয়াটার্সে বেড়াতে এসে যে গরুগুলো কেন উলঙ্গ হয়ে অমন অভদ্রের মত মাঠে দাঁড়িয়ে। অগত্যা আমি তখন সামনের পুজোর মধ্যেই তাদের পোশাকের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকটা চুমু অপ্রত্যাশিতভাবেই পেয়েছিলাম। ভাগ্যে সে আর পরে খোঁজ করেনি, নইলে আমার বিশ্বাসঘাতকার কারণে যে একটা গরুও নিজের লজ্জা নিবারণের উপায় পায়নি সেটা জানলে কি শাস্তি হত কে জানে।