শেফালি শাহ মানেই কি দিল্লী ক্রাইম? কিছুটা তো বটেই। দামিনী বেণী বসু তেমনই 'ছোটোলোক' ওয়েবসিরিজে।
ইদানীং খেয়াল করছিলাম বেশ কিছু ওয়েবসিরিজে শেফালি শাহের অনুকরণের একটা ব্যর্থ চেষ্টা। হচ্ছিল না।
দামিনী বেণী বসু সেই রাস্তাতেই হাঁটেনি। এমন একজন পুলিশের চরিত্র যার ইন্টারোগেশন করতে করতে অম্বলের ঢেকুর ওঠে, মেয়ের স্কুলের দিদিমণির চোখে চোখ রেখে তাকে তার সীমানা বুঝিয়ে দেয় স্পষ্ট ভাষায়, ভদ্রভাবে, ডিউটি থেকে রাতে ফেরার সময় বাজার করে আনে মাঝে মাঝে, বরের সঙ্গে রাতে বসে মদ খায়, মশারির মধ্যে মশা ঢুকে গেলে বরের সঙ্গে ঝগড়া করে। কিন্তু সে অকারণে তর্ক করে না। কাজটা নিঃশব্দে গুছিয়ে নেয়। তার জেদ ভীষণ। যে নিজের কাস্ট, নিজের উঠে আসার জায়গাটা ভোলে না। কিন্তু অবুঝ নয়। তার চরিত্রের নাম সাবিত্রী মণ্ডল। ওয়েবসিরিজের নাম "ছোটোলোক"। জি-ফাইভে স্ট্রিমিংরত।
ঘটনা কলকাতা, শহরতলী নিয়ে গড়ায়। অতীত বর্তমান মিলে গল্পের জাল বোনে। একটা খুনকে কেন্দ্র করেই গল্পের মূল সুর। কিন্তু সেখানে সমাজের অনেক ফাঁকফোকড় ধরা পড়ে। সেখানে কার্পেটের তলায় জমা ধুলোতে ফুঁ পড়ে। গল্প জটিল হয় আরো। পরিচালক একবার উঁকি দিয়ে সেসব দেখিয়েই আবার মূলস্রোতে গল্পকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর গল্প বলার ধরণটা বড্ড অদ্ভুত। দুটো ভাষায় গল্প বলেন। এক ক্যামেরার ভাষায় কিছু সংলাপহীন বাঙ্ময় মুহূর্তকে ধরে, আর বাকিটা সংলাপে ধরে। গল্পের গতি পা মেপে মেপে এগোয়। চরিত্ররা সিরিয়ালোচিত উচ্চনিনাদবহুল কণ্ঠস্বর ত্যাগ করে স্বাভাবিক কণ্ঠে, অনেক সময়েই চাপা কণ্ঠে কথা বলে। অকারণ যন্ত্রানুসঙ্গের ব্যবহার নেই। একপ্রকার নেই বললেই চলে।
ইদানীং বাংলা ওয়েবসিরিজগুলো যেভাবে হতাশ করছিল সেখানে এই ওয়েবসিরিজটা মনে থাকার মত। দামিনীর অভিনয় দাগ কাটার মত। বাকিরাও আছেন। ইন্দ্রাণী হালদারও যথেষ্ট ভালো। প্রেমাঙ্কুর বিশ্বাস ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এই ওয়েবসিরিজটার রিভিউ লিখতে গিয়ে কেট উইনসলেট অভিনীত বিখ্যাত ওয়েবসিরিজ 'মেয়ার অব ইস্টটাউন' এর নাম উল্লেখ করেছেন। সেখানে যেভাবে একটা খুনকে কেন্দ্র করে সমাজে নানা অন্ধকার দিক উঠে এসেছিল, এখানেও তাই। তবে সে ওয়েবসিরিজের ঘটনাটা একটা ছোটো শহরকে কেন্দ্র করে, তাই আমার মাথায় এই তুলনাটা আসেনি। তবে প্রেমাঙ্কুর বিশ্বাস দামিনীকে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখছেন সব শেষে…."Why shouldn’t Sabitri Mondol be a pan-Indian phenomenon?"
(সাবিত্রী মণ্ডল মানে যে চরিত্রটায় অভিনয় করেছেন দামিনী বেণী বসু)। এ বিষয়ে প্রেমাঙ্কুরের সঙ্গে আমি সহমত।