Skip to main content

        বললে তো হবে না, অনেকেই বারণ করেছিল বিশুদাকে বাড়িটা কিনবেন না, কিনবেন না। ভালো না বাড়িটা। এখন পস্তাচ্ছেন। 
        সেদিন সন্ধ্যেবেলা চপ কিনতে বাজারে গেছি। দেখি বিশুদা স্টেশানের এক কোণায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। দুনম্বর প্ল্যাটফর্মের ধারেই চপের দোকান। আমি দুটো আলুর চপ একটা ঠোঙায় নিয়ে গরম সামলাতে সামলাতে বিশুদার কাছে গিয়ে বললাম, কি গো অফিস যাওনি। 
        আমায় দেখে বিশুদার মুখচোখের চেহারা বদলে গেল, উৎফুল্ল হয়ে বলল, চা খাবি চ। 
        পাশেই চায়ের দোকান। ফাঁকাই আছে। আমরা বেঞ্চে বসলাম মুখোমুখি। সামনে টেবিল। ডালের দাগ এখানে সেখানে। ছোটোখাটো হোটেল মত এটা আসলে। মাসি চা দিয়ে গেল দু’গ্লাস। 
        বিশুদা একটা সিগারেট ধরিয়ে কিছুটা অন্যমনস্কভাবেই বলল, তুই ভূতে বিশ্বাস করিস?
        চারদিক তাকিয়ে দেখলাম বেশ আলো আলো, স্টেশানে কল্যাণী সুপার ঢুকছে। অফিস ফেরত প্যাসেঞ্জারের উপচে পড়া ভিড়। কত চেনা লোক। এরমধ্যে ভূতে বিশ্বাস? চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, কস্মিনকালেও না। মিথ্যা বললাম।
        বিশুদার মুখের ভাব বদলালো না। বলল, আমি ঠিক বিশ্বাস করতাম কিনা জানি না... আসলে ওসব নিয়ে ভাবিনি কখনও... কিন্তু...
        গল্প শুনব? ভূতের? দোকানটা যদিও ফাঁকা, কিন্তু বাইরেই তো রাজ্যের হইহট্টোগোল। যা হোক কাজ তো কিছু নেই। বিশুদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চল্লিশ পেরোয়নি। ভালো চাকরি করে। বাড়ির সাথে ঝামেলা করে হালিশহরেই আলাদা বাড়ি কিনেছে। এক মেয়ে রুমেলা, থ্রিতে পড়ে, বউদি নাচ শেখায়। 
- বড় জ্বালাচ্ছে। 
- কে?
- রতন
- রতন কে?
        বিশুদা আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো। আরে রতন, মৈত্রদার ফার্মেসিতে...
        মনে পড়ে গেছে। আমার শিরদাঁড়া দিয়ে হিম স্রোত নেমে গেল। রতন ফার্মেসিতে কাজ করত, লাইনে গলা দিয়েছিল মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে। মানে যার সাথে প্রেম করত, কৃষ্ণা। কৃষ্ণা এখন কাঁচরাপাড়ায় থাকে, কোন রেলে চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। 
- বলছে প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করতে।
        আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে... কোনোরকমে বললাম, মানে? 
        বিশুদা বলল, রাতদিন মাথা খেয়ে নিচ্ছে, ওই দেখ, 
        বিশুদার চোখের ইশারা ধরে ডানদিকে রাস্তায় তাকিয়ে দেখি রতনের মাথাটা রাস্তায় কাটা তরমুজের মত রাখা, আমার দিকে তাকিয়ে। আশেপাশে অত ভিড় অত লোক, কিচ্ছু হচ্ছে না ওর।


        ডাক্তার বলল গ্যাসে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির লোক তাই মেনে নিল। জ্বর ছিল চারদিন। পরে শুনলাম বিশুদা গয়ায় গেছে পিণ্ড দিতে। আর ফিরল না। কৃষ্ণা গলায় দড়ি দিল।


        মাস ছয়েক বাদে। চপ আনতে যাচ্ছি। বৃষ্টি পড়ছে খুব। আমি আর আমার বন্ধু আকাশ গেছি। হঠাৎ বিশুদার সাথে দেখা। সেই এক, হাতে সিগারেট, সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি এগোতে যাব আকাশ হাত টেনে বলল, কই যাচ্ছিস? বললাম আরে বিশুদা যে ওই দেখ... সে তাকিয়ে বলল, কই? কেউ নেই তো! 
        আবার তাকালাম। কৃষ্ণা দাঁড়িয়ে। ওর হাতে রতনের মাথাটা। আমার দিকে তাকিয়ে।