Skip to main content
 
সাহিত্যে যে কইটি পুস্তক না পড়া হইয়া থাকিলেও পাঠক সমাজে পড়িয়াছি বলিয়া নিজের মান রক্ষা করিতে হয় তন্মধ্যে 'চোখের বালি' একটি। তবে এই উপন্যাসটি ঋতুপর্ণ-ঐশ্বর্যা স্থিত হইবার পূর্বেই পাঠ করিয়াছিলাম, এবং অল্প বয়সেই পাঠ করিয়াছিলাম। যতটা না সাহিত্য রসের তাগিদে তাহার অধিক আদিরসের কৌতুহলে। সে কৌতুহল মিটিয়া ছিল কিনা স্মরণে আসে না, কিন্তু বেশ কয়েকটি উক্তি ও দৃশ্য মানসপটে বাসা বাঁধিয়া লইয়াছিল। পরবর্তীকালে পুনরায় পাঠ করি ও তৎসম্বন্ধীয় নানা আলোচনা পড়ি চলচ্চিত্রায়ণের কালে।
       লকডাউনে বিনোদিনীকে পুনরায় দেখিবার সাধ হইল, অগত্যা পুনর্বার পড়িবার প্রয়োজন পড়িল। পড়িতে যাইয়া একটি লাইনে মাথা ঘুরিয়া যাওয়ার জোগাড় হইল। নানা রসজ্ঞ, তত্ত্বজ্ঞ, নীতিজ্ঞ, গবেষককূল প্রভৃতি যে ক্ষুদ্র বাক্যটিকে গুরুত্ব না দিয়া চলিয়া গিয়াছেন তাহা আমার সামনে উদঘাটিত করিল উহান, অর্থাৎ কিনা ঊনবিংশতম কোভিড জননী। চীনে রবীন্দ্রচর্চার কথা পূর্বেই শুনিয়াছি। সেই চৈনিক রবীন্দ্রগবেষকগণও আপ্লুত হইবেন জানিয়া যে তাহাদের বহু পূর্বে এ ব্যাধির সম্ভাবনার কথা রবীন্দ্রনাথ বলিয়া গিয়াছিলেন। আর ভণিতা না করিয়া উক্তিটি লিখি।
 
.... বিনোদিনীকে ডাকিয়া বলিলেন, "সেই ইনফ্লুয়েঞ্জার পর হইতে আমার হাঁপানি হইয়াছে; আমি আজকাল সিঁড়ি ভাঙিয়া ঘন ঘন উপরে যাইতে পারি না।"....
 
       এই লাইনটি পড়িয়াই আমার চক্ষু চড়কগাছ হইল। ইহার পর বিনোদিনী উপরে যাইয়া মহিনের সাথে যাহাই অর্থ-অনর্থ ঘটাক না কেন, আমার তাহাতে রুচি রইল না, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুনিয়াই মন স্তম্ভিত হইয়া থ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। ভালো করিয়া তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া দেখিলাম রাজলক্ষ্মী ব্যতীত আশা, বিহারী, মহিন, জ্যাঠামশায়, অন্নপূর্ণা, মায় খেমী অবধি কাহারও এই উপসর্গের কথা লিখিয়াছেন কিনা। পাই নাই। তবে কাশির কথা থাকিলেও তাহা পদ্মশাসিত কাশি, কোভিড উৎপীড়িত নহে।
       কেহ বলিতে পারেন রাজলক্ষ্মীর তবে কাশি নেই কেন? তাহার উত্তর এক, সবার উপসর্গ এক হয় না তাহা বুঝ না? বাড়িতে সন্ধ্যাবেলায় সুমনকে চিকিৎসককূল লইয়া বসিতে দাও না বুঝি? আর দ্বিতীয় উত্তর হইল, তখন বাতাসে এত বিষাক্ততাও ছিল বলিয়া বোধ হয় না। হইত যদি তবে ঐশ্বর্যার শাড়ি অমন প্রথম হইতে শেষ অবধি ধোপদুরস্ত থাকিত না। আমা হেন শ্যেনদৃষ্টি লইয়া সিনেমা দেখিলেই এ সব জানা যায়, শুধু কাঁদিবার আর আদিরসাত্মক দৃশ্য দেখিবার আগ্রহে উহা দেখিলে এ সব জানা যায় না।
       যাহা হউক, লকডাউন শীঘ্র না হয় বিলম্বে উঠিবে, এই বিষয়ে গবেষণার কপিরাইট আমারই রহিল, অগ্রিম ঘোষণা করিয়া রাখিলাম। বাকিটা কালের ও মহাকালের হাতে।