কদিন আগে Nature Magazine বিশ্বের সেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করল। সেখানে দেখা গেল চীনের জয়জয়কার! প্রথম দশে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Harvard আর জার্মানির Max Planck — বাকি সব চাইনিজ প্রতিষ্ঠান। এই নিয়েই শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা: চীন কীভাবে ক্রমাগত গবেষণায় ফান্ডিং বাড়াচ্ছে, কীভাবে একের পর এক গবেষণাকেন্দ্র উঠে আসছে।
এই আগুনে ঘি ঢাললেন নোবেলজয়ী ভারতীয় বিজ্ঞানী ভেঙ্কি রামকৃষ্ণণ। The Hindu–তে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন—ভারতে গবেষণায় ফান্ডিং তো কমই, তার উপর নেই ধারাবাহিকতা। স্কলাররা নিয়মিত আর্থিক সহায়তা পান না, বরং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরও রাজনৈতিক চাপ থাকে।
চাপের উদাহরণ? ধরুন তামিলনাড়ুর কীলাডির প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। সেখানকার প্রধান গবেষক অমরনাথ রামকৃষ্ণ তিনবার ট্রান্সফার খেয়েছেন! কারণ? তিনি নাকি বৈদিক সভ্যতা আর কীলাডির সভ্যতার প্রাচীনত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন। এখন তাঁকে কার্যত বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ বিজ্ঞান নয়, প্রাধান্য পেয়েছে রাজনীতি, এমনই মত একপক্ষের।
আমাদের দেশে বিজ্ঞান নিয়ে যত না দরদ, তার চেয়ে ঢের বেশি দরদ কার কত মোটা প্যাকেজ নিয়ে কোথায় উড়ে যাচ্ছে—সেই খবরের প্রতি। পত্রিকায় যখন শিরোনাম আসে, “অমুক ছাত্র ১ কোটি টাকার প্যাকেজে বিদেশে”—তখন বাহবা কুড়োয়, কিন্তু ভারতের বিজ্ঞান গবেষণায় যে আমরা বিশ্ব দরবারে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মোটামাইনের একটা পদ পেলেই হল!
এবার আসি চীনের গাধা প্রসঙ্গে। লোকে বলে—পড়াশোনা না করলে মানুষ গাধা হয়। আর সেই গাধাকেই চীনে এমন গুরুত্ব! ১৯৯২ সালে চীনে গাধা ছিল প্রায় ১১ মিলিয়ন, আর ২০২৩-এ তা নেমে এসেছে মাত্র ১.৫ মিলিয়নে। কারণ? গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি হয় ‘ejiao’ নামের এক ঐতিহ্যবাহী ওষুধ, যা নাকি যৌবন ফিরিয়ে আনে, বার্ধক্য ঠেকায়, রক্তে স্রোত জাগায়! এমনকি, যমদ্বারের সামনে দাঁড়িয়েও প্রাণে টগবগিয়ে রক্ত দৌড়ায়—এমনই দাবি!
চীনে গাধা ফুরিয়ে গেলে এখন চোখ আফ্রিকার দিকে। বহু দেশ বলেও দিয়েছে—আর না! কারণ, গাধা গরিব মানুষের জীবনে অনেক জরুরি। সব মেরে কেটে, শুধু যৌবন ধরার আশায় গাধার চামড়ার পেছনে ছোটা কি সত্যিই বিজ্ঞানের নাম করে যৌক্তিক?
তাই বলি, এতোদিন গাধা নিয়ে যে ঠাট্টা-তামাশা করেছি, তা ভুলে যেতে হবে। যদি গাধার নির্যাসেই গবেষণার আন্তর্জাতিক তালিকায় শীর্ষে যাওয়া যায়—তাহলে, কোন মুখে আর গাধাকে ‘গাধা’ বলি?