Skip to main content

রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা পেয়েছিলেন। অনেকেই বললেন, টাকাটা কলকাতার কোনো নামী ব্যাঙ্কে, মানে নির্ভরযোগ্য ব্যাঙ্কে রাখতে। যেমন আমরা সবাই ভাবি আর কি। রবীন্দ্রনাথ তা রাখলেন না। তা না রেখে সাধারণ একটা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে রাখলেন। যখন কারণ জিজ্ঞাসা করা হল, উনি বললেন, গ্রামের উন্নতির জন্য নইলে চাষীরা টাকা কোথায় পাবে!

      কথাটা মনে পড়ল। সেটা ছিল ১৯১৩ সাল। এটা ২০২০। চাষী সে যুগেও ছিল। এ যুগেও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। নইলে খাব কি, এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

      স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব কিছু নিয়েই রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল। সাংগঠনিক ভাবনা অবশ্যই। মহাত্মারও অনেক ভাবনা ছিল। এদের দুজনের সমস্ত ভাবনার মূল সুরটা ছিল - উপায়ের উপর ততটাই গুরুত্ব দিতেন যতটা উদ্দেশ্যর উপর। বরং বলা যায় উপায়ের উপর গুরুত্বটাই বেশি থাকত, কারণ এনাদের বিশ্বাস ছিল যে উপায়টা সৎ না হলে উদ্দেশ্য সৎ হতে পারে না। উদ্দেশ্য ও উপায়ের মধ্যে একটা স্বচ্ছ সমীকরণ থাকতেই হয়। "সব ভালো যার শেষ ভালো" - এ তত্ত্বে দুজনেই বিশ্বাস করতেন না। কারণ কখনও কখনও অসদ্ উপায়ে কিছু ভালো হয়ে গেলেও তা কখনওই চিরস্থায়ী ভালো ব্যবস্থা আনতেই পারে না। ভিতটাই তো ফাঁকির।

      মুশকিল হল আগে একটা শব্দ খুব প্রচলিত ছিল, বিশেষ করে অটলবাবুর সময়ে - চর্চা। কোনো একটা বিষয়ে চর্চা হওয়ার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকত। বারবার হাতটা বিশেষ ভঙ্গীতে ঘুরিয়ে, চোখটা বন্ধ রেখে 'চর্চা' শব্দটা বারবার উচ্চারণ করতেন।

      চর্চা মানে আক্রমণ নয়, চর্চা আলোচনা। কোনো একটা বিষয়কে নানা দিক থেকে দেখে বিচার করে তবে তাকে একটা প্রয়োগের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।

      চর্চা বড় কমে গেছে আজ। প্রধান বিরোধী মুখেরাও বড় সোশ্যাল মিডিয়াবাসী। কোনটা ট্রোল, কোনটা আসল, কোনটা ফুটেজ, কোনটা বানানো - সব গুলিয়ে যায়। আস্ত একটা মানুষকে রাস্তায় দেখলে যে ভ্রমটা সহজে হয় না। কিন্তু সে ভ্রম কাটাবে কে?