সেদিন ছিল পূর্ণিমা। চাঁদ উঠেছে এত্তবড়। এত্ত সুন্দর। তার ছায়া পড়েছে গোলাপ দীঘির জলে। গোলাপ দীঘির টলটলে স্বচ্ছ জল আর চারদিকে ফুটে গোলাপ। লাল, নীল কত রঙের গোলাপ।
তো সেই গোলাপ দীঘির পাশে একটা ছোট্টো কুঁড়েঘর ছিল। সেই ঘরের ছাদে মেলা জুঁইগাছ। সেখানে থরে থরে ফুটে জুঁই। আর সেই ঘরে থাকত একজন বাউল। সে গান গাইত। একতারা বাজাতো। আর চারদিকের যত পশুপাখি তার কুঁড়েঘরের ছাদে, উঠানে এসে বসত।
একদিন হল কি, বাউল গান গাইতে গাইতে বিভোর। চারদিকে পশুপাখিরা চুপ করে শুনছে। তাল দিচ্ছে। এমন সময় বাউলের পেল তেষ্টা। বাউল গান থামিয়ে জলের পাত্র নিয়ে গোলাপ দীঘি গেল জল আনতে।
কিন্তু এদিকে হয়েছে কি বাউলের গানে তো শুধু পশুপাখি না, আকাশ, বাতাস, গাছপালা সবাই স্থির। মুগ্ধ। হবে নাই বা কেন? হৃদয় সাচ্চা হলে সুর তো সাচ্চা হবেই। আর সাচ্চা সুরে কে না দেয় সাড়া!
তো চাঁদও তো মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে। শুনতে শুনতে কখন যে চারপাশ ভুলে গেছে তার মনেও নেই। এদিকে বাউল তার জলের পাত্র গোলাপ দীঘিতে ডুবিয়ে জল ভরে বাড়িতে এনে দেখে সারাটা ঘর আলোয় আলো। কি করে হল?
আরে চাঁদের সেই যে ছায়া, সে বাউলের জলের পাত্রে পড়েছে বাঁধা। সে এসে পড়েছে বাউলের ঘরে। ঘরে দুধেল আলোয় কি যে আলো! পশুপাখি সব বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে!
কিন্তু চাঁদকে নিয়ে কি করে বাউল। চাঁদেরও ইতিমধ্যে গেছে ঘোর কেটে। সে বাউলকে বলল, আমায় যে ফিরতে হবে, তুমি আমাকে আবার দিয়ে এসো গোলাপ দীঘির জলে ভাসিয়ে। বাউল বলল, কিন্তু তুমি যে এলে কিছুই কি চিহ্ন যাবে না রেখে? চাঁদ বলল, বেশ, এক বিন্দু যাব রেখে, দিও কাউকে ইচ্ছা হলে। সে পাবে আমার মাধুর্য আর গোলাপের মিষ্টত্ব।
বাউল এলো চাঁদকে জলে ভাসিয়ে। আর তার জলের পাত্রের সেই চাঁদের কণাকে দিল দোয়েলের ডানায় লাগিয়ে। বলল, উড়তে উড়তে যা। যে শিশু আছে এই উত্তর দিকে মুখ করে, আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে, দিয়ে দিস তার গালে, মুখে লাগিয়ে।
বাকি গল্পটা কি আর বলা যায়? সে তো ছবিতেই দেখা যায়।