Skip to main content

ধইঞ্চা গাছের ঝাড়ের নীচে চুল্লু খেয়ে টাল হয়ে পড়ে আছে শিবে।

    নক্ষত্র টলতে টলতে তার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করল, বাড়ি যাবি না?

    শিবে বলল, নাহ্, মনটা বিষিয়ে গেছে....

    নক্ষত্র বলল, ক্যানো রে?

    শিবে বলল, কাবুলটাও শেষে তালিবানদের হাতে চলে গেল...

    সন্ধ্যে হব হব। ওদিকে শর্মাঘাট থেকে নৌকা এসে ভিড়েছে। সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তা দিয়ে যাত্রীরা ফিরছে।

    শিবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে। নক্ষত্র উদাস হয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে। তালিবানদের খবর তো সেও পড়েছে। কিন্তু ভাবেনি তো। ভাবার সময়ও ছিল না যদিও। গতকাল রাতের খাওয়াটা হজম হয়নি। চারবার যেতে হয়েছে। ওদিকে আজ বাড়িতে রাতে বিরিয়ানি হবে। মেয়ে রাঁধবে, নতুন শিখেছে। নক্ষত্রের ভয়ও করছে, আবার লোভও হচ্ছে। মেয়ে, চিকেন না মাটন এখনও জানায়নি....

    শিবের পাশে শুয়ে পড়ে বলল, এদিকে আসার সম্ভাবনা আছে?

    শিবে বলল, মনে হয় না....

    নক্ষত্র একবার কল্পচক্ষে দেখল শর্মাঘাটে নৌকা থেকে নেমে হুড়মুড় করে তালিবানেরা ঢুকে পড়ছে। 'আল্লাহ হো আকবর' বলে লাফিয়ে, তার বাড়ি ঢুকেই দেখে এক প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে বসে নক্ষত্র। পাশে ডাইজিনের বোতল। তালিবান ভাবছে খাবে কি খাবে না.....

    হঠাৎ জোরে মোবাইল বেজে উঠল ... "জানে মেরা জানেমন... বসপন কো পেয়ার কাভি ভুল নাহি জানা রে"...

    হ্যালু....

    শিবে ফোন ধরল। কয়েকবার 'হ্যাঁ হুঁ' করে ফোন রেখে দিল।

    কে রে?

    শিবে বলল, ঘানি.... কাবুল ছেড়ে দিল....

    কে ঘানি... নক্ষত্র মনে করতে পারল না.... এদিকে আসছে?... শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত নেমে গেল.... এসবই তালিবানদের কথা বুঝল। নক্ষত্র বলল, কাল পালেদের বাড়ি ছাদ ঢালাই, হেড মিস্ত্রী জানিয়েছে তোমায়? ভোরেই যেতে হবে... এদিকে কোমর‍টা যা টাটাচ্ছে....

    শিবে উত্তর দিল না। জগা চুল্লুর দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। "আমার মা ত্বং হি তারা".... জগা গাইছে।

    মা কালী কি রক্ষা করতে পারবে তালিবানদের হাত থেকে? এ শিবে, পারবে?

    শিবে বলল, স্টেনগান লাগবে..... ঝরররররর... ঝররররর...

    শিবে আচমকা উঠে হাতটা স্টেনগানের মত বাগিয়ে অলক্ষ্যে কাকে যেন গুলি করতে শুরু করল...

    নক্ষত্র দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, তোমার নেশাটা বড় বেশি হয়েছে দাদা... চলো বাড়ি যাই.....

    শিবে বলল, সব শালাকে শেষ করে দেব....

    নক্ষত্র বলল, তালিবানদের?

    শিবে বলল, কে তালিবান? এই শালা পাড়ার পুজো কমিটিকে... বলে ওদের নাকি মেঝে বানানোর পুরো সিমেন্ট দিতে হবে, সঙ্গে কুড়ি হাজার ক্যাশ... নইলে নাকি এ পাড়ায় বাড়িই করতে দেবে না..... আমায় মালিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে নাকি....

    নক্ষত্রের সব গুলিয়ে গেল। তালিবান, পাড়ার 'চলো প্যাঁদাই, কিছু করে দেখাই' ক্লাবের সেক্রেটারি মস্তান শ্রীযুক্ত গুলুমুলু ঠাকুরের মুখ, মেয়ের বিরিয়ানি, ডাইজিনের বোতল, কাবুলের রাস্তা, শর্মাঘাট, পেটের মধ্যে গুড়গুড় করে উঠল।

    ওদিকে এক হাতে চুল্লুর প্যাকেট, অন্য হাতে স্টেনগানের ভঙ্গি নিয়ে শিবে চলেছে 'চলো প্যাঁদাই, কিছু করে দেখাই' ক্লাবের দিকে। নক্ষত্র উঠতে গেল। পারল না। এখনই বসতে হবে। ডাক এসেছে। ধইঞ্চা গাছের নীচে বসল। চাঁদ উঠেছে আকাশে। কোনো গাছে প্যাঁচা ডাকছে। জগতে সবই যেন কেমন গোলমেলে। পেট পরিষ্কার হলে কিছুক্ষণের জন্য সব মধুময় লাগে। বাকি সব...

    মেয়ের ফোন....

    বাবা চিকেন এনো....