সৌরভ ভট্টাচার্য
10 October 2019
অভিমন্যু হেরে গিয়েছিলেন। কেন? না তিনি চক্রব্যূহ প্রবেশের পথ জানতেন। বেরোনোর পথ জানতেন না।
শাস্ত্রের ব্যাখ্যা কি?
মা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে তিনি গর্ভে থাকাকালীন শেষ অংশটা শুনতে পাননি।
অত বড় বীর, তা জন্মের পর বাকিটা জেনে নেননি কেন?
আমার মনে হয় বিশ্বাস করেছিলেন কোথাও।
কাকে?
নিজের আত্মীয়স্বজন, পরিবারকে।
কিভাবে?
হয় তো ভেবেছিলেন যতই তারা বিরুদ্ধপক্ষ হয়ে দাঁড়ান, ততটাই কি অমানবিক হবেন? হাজার হোক একই পরিবারের লোক তো তারা। তাই হয়ত কিছুটা ক্ষমা, কিম্বা কোমলতা, বা স্বল্প প্রশ্রয়ের আশা মনে ছিল। ভেবেছিলেন হয় তো সেই সব রথী-মহারথীরা ভাববেন, আহা এইটুকুন বয়সে কেমন ঢুকে পড়েছে দেখো, নাই বা জানল বেরোনোর পথ, চলো আমরা একে বার করে দিই, না হয় স্বল্প আঘাতেই বার করে দিই... তা বলে এক্কেবারে প্রাণে মেরে ফেলবে?... হয় ত ভাবেন-ই নি অভিমন্যু!
"বিশ্বাস" অনেক সময় একটা চক্রব্যূহের মত। ঢুকে যাওয়া যায়, কিন্তু বেরোনোর পথ পাওয়া যায় না। তখন "আপনজন" এর বাণেই প্রাণ নাশ হয়। কারণ চাইলেও সে সেই "আপনজন" কে আর অবিশ্বাস করতে পারছে না, তার হৃদয়ে লাগছে, মনে হচ্ছে, "এ এরকম করতে পারে?"... "এরা এরকম বলতে পারে?".... অথচ রাস্তার মানুষটা তার চাইতে ঘৃণ্য নিষ্ঠুর রূঢ় ব্যবহার করলেও কিন্তু তার বুকে বাজে না, গায়েই মাখে না, কেন? কারণ তখন সে চক্রবুহ্যে নেই তো, তার হৃদয় তো তাকে পর বলেই জানে। তাই 'বিশ্বাস' এর চক্রব্যূহ'আপনজন' রথী-মহারথীরা শব্দটা যা তৈরি করে তাতে প্রবেশের পথ মেলে, বেরোবার পথ আর আমরণ পাওয়া যায় না।
চারদিকে এমন চক্রব্যূহে ছটফট করে মরছে এমন মানুষ কম কোথায়? স্বজনের বাণে বিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করতে করতে "ভাগ্য-ঈশ্বর-দুষ্টসঙ্গ" ইত্যাদি নানা কল্পিত সত্তাকে দায়ী করতে করতে ধুঁকতে ধুঁকতে মরছে, তবু বলবে না, আমিই দায়ী আমার "বিশ্বাস" এর চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে না পারার জন্য। ক্ষীণ আশা, তারা যে আমার আপনজন! এতটা ক্ষতি করবে?
সংসারে কত অভিমন্যু দেখলাম, নিজের পরিবার ভাসিয়ে অন্যের পরিবার দাঁড় করাতে গিয়ে শেষে নিজের অভিমন্যুর মত মৃত্যু!
এ চক্রব্যূহ যে সাংঘাতিক...