Skip to main content
আজ দীপাবলি। চারিদিকে আলোয় আলোকিত। চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে আলোর উৎসাহ। “আরো আলো আরো আলো প্রভু নয়নে মম ঢালো”। হ্যাঁ, আরো আলো চাই। শুধু বাইরের নয়নে না, মনের দুটি নয়নেও। কি সে আলো?
সে আলো হল চেতনা। যাকে আমাদের সাধকেরা “মা” বলে ডেকে এসেছেন যুগ যুগ ধরে।
-কোন মা?
-জগতের মা। স্বার্থপরতা, ভয়, লোভ ইত্যাদি সব অশুভ শক্তির যিনি বিনাশ করতে পারেন সেই মা। তাঁকে সাধকেরা বলেছেন কি জানো? শক্তি। যিনি শিবের শক্তি। যিনি মঙ্গলের শক্তি। সেই শক্তিই হলেন চৈতন্যশক্তি, তোমার ভিতর আমার ভিতর। যার জোরে তুমি আমায় চিনছো, জগৎ চিনছো, নিজেকে চিনছো সেই মা, সেই চেতনা।
একবার ভাবোতো সেই আদিকালের কথা। কিভাবে জীবের সৃষ্টি হল। শরীরে প্রাণ হল, প্রাণে মন হল, মন থেকে বুদ্ধি হল, অবশেষে বোধ তৈরী হল। কে সে কারিগর? যে জড়ের রাজ্যে ধীরে ধীরে চেতনার রাজ্য তৈরী করল? সেই মহাচেতনা। যিনি ধীরে ধীরে, যুগ যুগ ধরে এই পথের দিশা দিয়ে আসলেন। মাঝপথে হারিয়ে গেল না, লুপ্ত হয়ে গেল না, বিনাশ হল না।
-কিন্তু আমি তো সে মহাচেতনাকে উপলব্ধি করি না?
-কি করে করবে? ধরো তোমার ঘরে শুধুমাত্র একটা ঘুলঘুলি আছে। তা দিয়ে দিনের আলোর কিছুটা তোমার ঘরে প্রবেশ করে।
তুমি তাই দিয়েই তোমার যাবতীয় দৈনন্দিন কাজ সমাধা করো। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছো এই আলো কোথা থেকে আসে? যেদিন তুমি ভাবতে শুরু করবে, সেদিন থেকে শুরু হবে তোমার ভিতরে চলার আরম্ভ। তুমি দেখবে ধীরে ধীরে তুমি আলোর ছোট বৃত্ত ছাড়িয়ে আরো বড়ো বৃত্তে পা রাখছো। অনেক সংশয় দূর হচ্ছে, অনেক ভয় ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। তুমি যেন অন্য মানুষ হয়ে যাচ্ছ। তোমার জীবন একটা অব্যক্ত আনন্দে ভরে উঠছে। কারণ যিনি চৈতন্যময়ী, তিনি আনন্দময়ীও তো বটে।
গর্ভধারিণী মা যেমন একটি শিশুর সব দুর্বলতা বোঝেন, জগতের মাও বোঝেন। তুমি বিশ্বাস রাখো। তোমার নাস্তিকতার আবরণ শুধু অজ্ঞতার অভিমান মাত্র। শুধু জানো মা সব জানেন, সব বোঝেন। তুমি যতবার পড়ে যাবে, কাঁদবে “মা” বলে, তিনি ততবার তোমায় কোলে তুলে নেবেন। তুমি আবার ভুলে যাবে, আবার কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করবে। মা আবার তোমায় নামিয়ে দেবেন। তুমি খেলতে খেলতে আবার মাকে ভুলবে। আবার পড়বে, আবার কষ্ট পাবে, আবার কাঁদবে। মা আবার আসবেন তোমায় তুলে নিতে কোলে। এ খেলা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তুমি কে এর অন্যথা করবে?
আজ দীপাবলি। শুধু বাইরে না, ভিতরেও আলো জ্বালার দিন। প্রতিদিনের তুচ্ছতায়, মলিনতায় যে আলো ম্লান হয়ে নিভু নিভু হয়ে আসছে, তাকে আবার জাগিয়ে তোলার দিন আজ। বসো গিয়ে মায়ের মন্দিরে। যেখনেই মাকে মনে পড়ে সেই মায়ের মন্দির। চোখ বন্ধ করো। সমস্ত বুক দিয়ে বিশ্বাস করো, যে শক্তিতে তুমি শক্তিমান, জগৎ চলমান, সে শক্তি তোমার মা! শুধু তোমার না, চোর, বদমাশ, অতিবড় পাষণ্ডেরও মা! তুমি বিচার করতে যেও না। সাধক বলছেন, “শ্যামা মা মোর সর্বঘটে”। আরো আছে। কে খ্রীষ্টান, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ দেখতে যেও না। সাধক গাইছেন, “জেনেছি জেনেছি তারা, জেনেছি তোর ভোজের বাজী/ যে তোমায় যে নামে ডাকে, তাতে তুমি হও মা রাজী”।
শুনলে ভাই! সব মা! তুমি শুধু ভেদ-বুদ্ধি ছাড়ো।

প্রার্থনা করো, যা তোমার চাই। শুধু মনে রেখো তা যেন মঙ্গলের জন্য হয়। তুমি পাবে।
আর সবচেয়ে ভাল হয় যদি চৈতন্য প্রার্থনা করতে পারো। তুমি নিজেই বুঝবে সেদিন কিসে তোমার মঙ্গল।
যেমন সাধক গেয়েছিলেন----
“আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা আনন্দময়ী”

জয় মা! জয় মা! জয় মা!