সৌরভ ভট্টাচার্য
26 May 2014
ছাদে বসে আছি একলা। সন্ধ্যেবেলা।
পূবাকাশে উঠল একলা চাঁদ।
পূর্ণ চাঁদ।
মনে হল সঙ্গী পেলাম। তাকালাম হেসে। সেও তাকাল প্রসন্ন মুখে। জানতে চাইলাম, "ব্যস্ত? কিছু কথা বলা যাবে?"
সে নীরবে জানাল সম্মতি।
"জান, একটা কথা তোমাকে দেখলেই মনে হয়। কত কিছুর সাক্ষী তুমি। হায়! যদি তুমি কথা বলতে পারতে! কত ইতিহাস হয়তো লিখতে হত নতুন করে বা জুড়তো কত নতুন অধ্যায়। নয় কি?"
চাঁদ হেসে তাকাল আমার চোখের দিকে।
"আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে সেদিনের কথা, বলবে?"
সপ্রশ্ন তাকাল চাঁদ আমার মুখে।
"যেদিন রাতে চানাকে (বুদ্ধের সারথি) নিয়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন রাজগৃহ ছেড়ে, তোমার মনে আছে?"
মনে হল উদাস হল চাঁদ।
"বল না আমায় তাঁর কথা। কেমন দেখতে ছিল তাঁকে? কি ছিল পরনে? কি কি কথা হয়েছিল শেষ চানার সাথে?"
চাঁদ হল গম্ভীর।
"আচ্ছা, তোমার মনে আছে বোধিবৃক্ষ থেকে তাঁর পরম প্রাপ্তির পরক্ষণটার কথা। কেমন হয়েছিল তাঁর মুখের ভাব? সে অরণ্যে তিনি তখন একা। আর তাঁর সাক্ষী তুমি।
আমায় বল কেমন ছিল তাঁর চলা, বসা, কথা বলার ভঙ্গী?"
আমার চারিপাশের বাতাস হয়ে উঠেছে মন্থর। গাছগুলোও যেন স্থির হয়ে উৎকর্ণ, চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তরের প্রত্যাশায়।
কাল গেল বয়ে।
চাঁদের দু'চোখ বন্ধ ধ্যানে।
আমার হৃদয় জুড়ে মৈত্রেয় জাতক।
রাত গভীর হল।
চাঁদ মধ্যগগনে।
"কত যুদ্ধের সাক্ষী তুমি। দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ! আরো কত হত্যা, নৃশংসতা দেখতে হয়েছে তোমায়। ভাগ্যে পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে তুমি, না হলে রক্তের ছিটে লেগে থাকত তোমার শুভ্র বুকে কলঙ্কের চেয়েও গভীর দাগে।"
ম্লান হল চাঁদের মুখ। এক টুকরো কালো মেঘ কোথা থেকে এসে ঢেকে দিল তার মুখ।
ক্ষণিকের জন্য কালো হয়ে এল আমার চারিধার। কোথা থেকে পেঁচা ডেকে উঠল কর্কশ স্বরে।
আমি চোখ বুজলাম।
আমার হৃদয় জুড়ে রক্তাক্ত ইতিহাস।
কান্না, আর্তনাদ আর বিভীষিকার কালো মিছিল।
কেন? কেন? কি প্রয়োজন ছিল?
কোনো উত্তর নেই।
কানের কাছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বইছে বাতাস।
খুব রাগ হল, চীৎকার করে বলে উঠতে ইচ্ছে করল, কি দরকার তোমার পৃথিবীর আকাশে ওঠার? অন্য কোনো আকাশ নেই!
বললাম না। চুপ করে থাকলাম।
কখন জানি না হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগল। কানে আসছে পাখির ডাক।
ধীরে চোখ মেললাম। দেখি ধ্যানমগ্ন চাঁদ।
কার ধ্যান? নীরবে প্রশ্ন করলাম।
শুকতারা ইঙ্গিত করল পূর্বাকাশে।
দেখলাম, অরুণ আলোয় সারা আকাশ সবিতার বন্দনায় ব্যাপৃত।
আমার দু'চোখ ভরে নামল জল।
মনে বললাম, "তোমারি হউক জয়!"