প্রতিটা মানুষের একটা ব্যক্তিগত গন্তব্য থাকে। যা তার চারপাশ আর তার ইচ্ছা-সামর্থ্য তৈরি করে।
চারপাশ কেমন হবে? আমার হাতে সবটা নেই। ক্ষুদ্র অংশ আমার হাতে। বাকিটা "সত্যেরে লও সহজে"।
ইচ্ছা-সামর্থ্য?
ইচ্ছা। ইচ্ছা করলেই ইচ্ছাকে ইচ্ছা করতে পারি না। ইচ্ছার নানা জাতের কন্ডিশন আছে। আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলছে আছে। তুমি চাইলেই যা খুশী ইচ্ছা করতে পারো না। অনেক শর্ত আছে।
সামর্থ্য। সেও নানা শর্তে অধীন। তবে উপায় কি? বাইরে থেকে টান? না ভিতর থেকে ঠেলা?
কেউ জানে না। ক্যারামবোর্ডের মত। যত ভালোই টিপ রপ্ত হোক না কেন, মুহূর্তে বোর্ডের উপর গুটির সজ্জাবিন্যাস বদলে যাবে। কেমন হবে? কেউ জানি না।
গোটা জগত এমন একটা ক্যারামবোর্ড। ভাগ্য আর নানা শর্তে শর্তাধীন মানুষ নিজেকে স্বাধীন ভাবার ভ্রমে জোর সে লেগে পড়েছে। খেলতে খেলতে বুঝছে, সব হাতের বাইরে। বারবার খুঁজছে, কে চালাচ্ছে? কে? পুজো করে, স্তব গেয়ে কিছুতেই রাস্তা পাচ্ছে না। যেখানের গুটি সেখানে থাকছে না। যেমন হবে ভাবছে কিচ্ছু হচ্ছে না।
তবে? উপায় নেই? আছে। সংঘর্ষ হবেই, কিন্তু ঘর্ষণজনিত তাপ কমানো যেতে পারে। বোর্ডের উপর পাওডার ছড়াও। স্মুদ করো ব্যাপারটা। পাওডার কি? সহানুভূতি। ঠেলা খাও। ঠেলা মারো। কিন্তু যতটা পারো কমাও। সে বুঝুক তুমি যা করছ নেহাত বাধ্য বলেই করছ। সেও যা করছে নেহাত বাধ্য বলেই করছে। তুমিও বোঝো।
দেখছো না একটা বিপ্লব অবধি চাইলেই হয় না? একটা সময় লাগে? ইরান আর কিমের রাজত্ব দেখো। চাইলেই সবাই কিমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে না কেন? হয় না। কোন গুটি কখন কিভাবে ছুটবে কেউ জানি না।
নইলে আমাদের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা কেমন ভয় দেখালে না? বললে, আমরা নাকি আর কোনোদিন মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোতেই পারব না। আমাদের জীবন যাত্রাতে নাকি এগুলো সব পার্মানেন্ট হয়ে গেল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হল না তো! একদল বলল ভ্যাক্সিন ভালো। একদল বলল খারাপ। একদল বলছে এই যে কমছে করোনা এর কারণ ভ্যাক্সিন। আরেক দল বলছে, না, সব প্রাকৃতিক।
সিদ্ধান্ত হবে নাই গো। যা বিশ্বাস করলে মনে সুখ, সে নিয়ে চললেই হয়। যেমন আস্তিক মন ভাবে ক্যারামবোর্ডের বাইরে আছে এক মহান হস্ত। কেউ বলে তিনি নীতিবান, কেউ বলে তিনি করুণাময়। কেউ বলে তিনি বালকস্বভাব।
নাস্তিকে বলে সব অ্যাবসার্ড। কার্যকারণে গাঁথা। যদিও ও কার্যকারণ সূত্র খুঁজতে গিয়ে থই পাবে না। তাই দেখছ না, জানা ফ্যাক্টরের বাইরে আরো নানা অজানা ফ্যাক্টর আছে। সবটাই অ্যালগরিদম। কিন্তু ডেটা? সে তো অনন্ত। অসীম ক্যানভাসে অনন্ত ইনপুট। একটা ক্ষুদ্র অংশে কিছুটা ভবিষ্যতবাণী করা যায়। কিছুটা মেলেও বা। কিন্তু যেই ক্যানভাস বড় হল, অমনি সব ঘেঁটে ঘ। কাম্যু দাঁত ছড়কুটে বলল, সব অ্যাবসার্ড দাদা, আগেই বলেছিলাম। বেকার ঘামালে নিজেকে। ভীষ্ম কণ্টকশয্যায় শুয়ে হাতজোড় করে বলছেন, কিস্যু বুঝলাম না কৃষ্ণ। সেই অ্যাবসার্ড তত্ত্ব।
দার্শনিক বলল, শান্ত থাকো, সহ্য করো। মায় নীৎজে অবধি সেই বলে ক্ষান্ত হল। এইখানে আস্তিক নাস্তিক সব এক্কাট্টা। সহ্য করো। ক্ষেপে গিয়ে লাভ নেই। সহানুভূতি নিয়ে সহ্য করো। সহানুভূতি রাখো, ওটুকুই সার। বাকি হিসেবনিকেশ কিস্যু মিলবে না। গভীর হতাশে ডোবার চাইতে, সহানুভূতিতে বাঁচো। অন্যের অনুভবকে বোঝো। দেখো তোমার থেকে এমন কিছু আলাদা নয় কেউ। এট্টু উনিশ-বিশ। এরপর ক্যারামবোর্ডে আর গোঁত্তগুঁত্তির জায়গা থাকবে না গো… একটা সুর বাজবে। সে সুরে সমে এসে না মিললেও। ক্ষোভ থাকবে না। রাসেল এই ক্যারামবোর্ডের উদাহরণ দিয়েই বলল। উফ, আর ক্যাঁচাল কোরো না তো! ঘ্যানঘ্যানানি থামাও। দেখো তুমি একাই নও, পেত্থম নও যে কিমা হচ্ছ! সব আছে। সয়ে যাও। সহানুভূতি রাখো খোকা। চিল্লিও না মেলা।
মুক্তি? ওই যে, আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে।