ঝুলবারান্দায় বসে বসেই বেলা
এগারোটা বেজে গেল। সকাল থেকে খাওয়া বলতে এক কাপ করে চা।
"জলখাবার কি বানাতে বলব?"
ভদ্রলোক
উত্তর দেননি। স্ত্রীও আর প্রশ্নটা করেননি। আবীরে, রঙে বাড়ির
সামনের রাস্তাটা চেনাই যাচ্ছে না।
সেকেণ্ড
ওয়েভ শুরু হল যখন ছেলে চলে এসেছিল সিঙ্গাপুর থেকে। বাবা মায়ের কিছু হলে কে দেখবে?
এখন কে
দেখবে?
তিনজনই
হাস্পাতালে ভর্তি হয়েছিল। ছেলেটাই ফিরল না।
পাড়ার
লোকেরা কেউ আসেনি। সেই ভালো। কেউ কেউ ফোন করেছিল। কথা বলতে ভালো লাগে না।
সন্ধ্যে হল।
গীতবিতানটা নিয়ে বাবা মা বসলেন ছেলের ছবির সামনে। ভীষণ ভালো গাইত বাবু। দক্ষিণীতে
শিখত। কয়েকটা গান গাইবেন। বাবুর জন্য।
গান শুরু
হল। বাবা গাইছেন, দীপ নিভে গেছে মম।
পূর্ণিমার
চাঁদ ঝুলবারান্দা পেরিয়ে আলোর ডালা সাজিয়ে বসেছে বাবা মাকে ঘিরে। মা নিজের হাতটা
চাঁদের আলোয় ধরলেন। চাঁদের আলো বেয়ে যেন বাবু হাতটা ছুঁয়ে গেল।
ভদ্রমহিলা
উঠে আলোটা নিভিয়ে দিলেন। চাঁদের আলো, প্রদীপের আলো,
বাবুর হাসি মুখ, দীঘায় তোলা, আর তারা দুজন। এই তো সব। এই তো ঘর। গীতবিতানের পাতা মোড়া।
"শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে"। মা গাইছেন। গীতবিতানের কিছু পাতায়
চিরকালের বাস। সবার নিজের নিজের পাতা থাকে গীতবিতানে। নিজের নিজের গানের পাতা।
প্রদীপটা
অল্প অল্প কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভদ্রলোক বললেন, বাবু যায়নি কোথাও।
একটু আবীর নিয়ে এসো। ওর গালে দিই। দু বছর তো আসতেই পারেনি বেচারা। কি মন খারাপ
করত। এ বছর দিই, এসো।
ভদ্রমহিলা
আবীর আনতে গেলেন ঠাকুরঘরের দিকে। অন্ধকারেই। কিছু জিনিস খুঁজে পেতে বাইরের আলো
লাগে না যে!