Skip to main content
brata

জীবনে একটা ব্রত থাকা দরকার। এমন একটা চেষ্টা থাকা দরকার যা আমার সব স্বার্থের উর্দ্ধে। সেখান থেকে আমি কিছু চাই না। সেখানে আমি নিত্য কিছু দিই। যেমন নিজের উপার্জন থেকে নিত্য কিছু সঞ্চয় করি, তেমন। সেখানে আমি নিত্য কিছুক্ষণ নিজেকে দেব। তাৎক্ষণিক কিছুতে ডুবে যাব না। কোনো উত্তেজনা, কোনো চঞ্চলতায়, কোনো ভয়ে, কোনো আশঙ্কায়, কিছুতেই নয়।

সেটা আমার রেওয়াজ হতে পারে, আমার ছবি তোলা হতে পারে, আঁকা হতে পারে, লেখালেখি হতে পারে, পড়াশোনা হতে পারে, বাগান তৈরি হতে পারে। আরো অনেক কিছু হতে পারে যেখানে আমাকে নিজেকে নিয়োজিত করতে হয় খুব একাগ্রতার সঙ্গে, গভীর ভালোবাসায়। যেখান থেকে আমার আশু লাভের কিছু নেই। কিন্তু যেখানে দিনে অন্তত আধঘন্টা দিলে মনের মধ্যে মুক্তির আনন্দ আসে।

এরকম একটা ব্রত না থাকলে নিজেকে নিজে শেষ করে ফেলি আমি। ক্ষোভে, অশান্তিতে, ভয়ে, আশঙ্কায় জীবন জেরবার হতে থাকে। নিজেকে নিয়ে সে যে কি বিড়ম্বনা। নিজের হাত থেকেই নিজেকে বাঁচানোর জন্য তেত্রিশ কোটি দেবতার পায়ে মাথা কুটে মরি। একটু শান্তি পাওয়ার জন্য। তিলে তিলে নিজেকে ব্যর্থ করি।

আমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে কেউ পারে না, এক সু-ব্রত ছাড়া। প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও এ কাজটা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় তত মঙ্গল। নিষ্ঠা নিয়ে। ভালো লাগুক চাই না লাগুক, সে ব্রত উদযাপনে আমাকে যেতেই হবে, তবেই না সে ব্রত! তবেই না সে ধীরে ধীরে এক বিশাল শক্তির আধার হয়ে আমাকে রক্ষা করবে! সেকি একদিনে হবে? না, তার জন্য রোজ নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, সেই স্কুল জীবনের মত। আজ 'ইচ্ছা করছে না', পরশু 'এই বেশ আছি'….এইভাবে নিজেকে ফাঁকি দিতে শুরু করলে শেষে নিজেকেই ফাঁকে পড়তে হবে।

একটা চেষ্টা থাকুক, আমার ক্ষুদ্রতাকে, আমার সব স্বার্থবুদ্ধিকে, আমার সব দুর্বুদ্ধিকে অতিক্রম করে। দিনে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য। সে-ই আমায় রক্ষা করবে বিষাদের গহ্বর থেকে, ব্যর্থতার অন্ধকার থেকে। যুক্তি দিয়ে, বিশ্বাস দিয়ে অবশেষে নিজেকে রক্ষা করা যায় না। নিজেকে রক্ষা করার উপায় কিছু একটা করা। একটা চেষ্টা। শুধু কথা নয়। শুধুই এড়িয়ে যাওয়া নয় ভিতরে তিলে তিলে জমা শূন্যতার বোধকে। একবার মুখোমুখি হয়ে নিতেই হবে। সে শক্তি দেবে আমার ব্রত। আমায় রক্ষা করবে। পাখি যেমন সুদিনে খড়কুটো জোগাড় করে তিলে তিলে তার নীড় বানায়, যে নীড় তাকে দুর্দিনে রক্ষা করে, আমারও তেমন একটা নীড় তৈরি হোক, ব্রত-নীড়। যেখানে আমি রোজ নিজেকে অল্প অল্প করে দিই শুধু, চাই না কিছু। তাতেই আনন্দ।

একটু দর্শনের দিকে তাকিয়ে যদি ভাবি। বুদ্ধ দু:খকে সত্য বলছেন, বিষাদকে নয়। আবার বেদান্ত সুখকে মিথ্যা বলছেন, আনন্দকে নয়। দু:খ থেকে আনন্দের দিকে যাওয়ার একটা পথ আছে। নিজেকে কোনো একটা ব্রতে ব্রতী করে না নিলে সে পথ মেলে না। "আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল", ঠাকুর বলছেন। "বীজটা মরলেই গাছটা হয়", বাইবেল বলছেন। দু:খ আছে। দু:খের থেকে ত্রাণের রাস্তাও আছে। নিজেকে নির্ভার করতে হবে। রাজার চিঠি সবার ঘরে এসেছে। ফকিরও এসেছে। সুধাও ডেকে গেছে রোজ। এবার আমায় সময় করতে হবে। তৈরি হতে হবে। জীবন কি এমনিই হো হো করে কাটিয়ে দেওয়ার! এত বড় জীবনযজ্ঞে এমনিই খালি হাতে আসব? আমার কি কিছুই দেওয়ার নেই? তা হতে পারে না। হতেই পারে না।

 

(ছবি: Pritam Pal)