Skip to main content
 
 
 
        বিবেকানন্দের একটা প্রিয় উপমা ছিল। একটা বীজ, সে জল-মাটি-বাতাস-আলো নিয়ে অঙ্কুরিত হয়, কিন্তু সে নিজে জল, মাটি, বাতাস কিম্বা আলো হয়ে যায় না, সে একটা গাছই হয়। 
        কিন্তু হঠাৎ করে কিছু মানুষ যেন ক্ষেপে উঠে বলতে চাইছে, তা নয় নয়..এই যে বীজ, এ অঙ্কুরিত হল সম্পূর্ণ মাটির গুণে, কেউ বলছে, না এই আলোর গুণে, কেউ বলছে বাতাসের তো কেউ বলছে জলের। কিন্তু কেউই বলছে না বীজটার নিজের মধ্যে একটা প্রাণশক্তি ছিল, তার জোরেই সে বাইরের সব উপকরণকে গ্রহণ করতে পেরেছে, ত্মভূত করতে পেরেছে।
        মানুষের মধ্যে সেই সংশ্লেষ আর বিশ্লেষণের ক্ষমতা আছে বলেই সে আলাদা অন্যান্য প্রাণীকূলের থেকে। সেই তার কেন্দ্রস্থ চেতনা। বিবেকানন্দের আরেকটা উপমা - একটা বিশালাকায়, প্রভূত ক্ষমতাসম্পন্ন রেলইঞ্জিন লাইন বেয়ে ধেয়ে আসছে, আর ঠিক সেই সময়েই সেই লাইন বেয়ে একটা ছোট্ট পিঁপড়ে এগিয়ে চলেছে। ইঞ্জিনটা আসছে দেখে সেই পিঁপড়েটা রেললাইন থেকে নেমে গেল। কিন্তু ইঞ্জিনটা কোনোদিন লাইন থেকে নামতে পারবে না, যতই ক্ষমতাসম্পন্ন হোক না কেন সে। কারণ সে জড়, শুধুই নিয়মাধীন। পিঁপড়ে হল চেতনা। চেতনার ক্রিয়াশীল দিকটা হল ইচ্ছা।
        সব মানুষের জীবনেরই দুটো দিক আছে। এক তার দৈনন্দিন জীবন, দুই তার মধ্যে স্থির শান্ত একটা আন্তরিক স্থায়ী জীবন। সাধারণ মানুষের প্রথমটাই হয় মুখ্য, মহানুভবের দ্বিতীয়টা হয় মুখ্য। কিন্তু দুজনের মধ্যেই এই দুইদিক থাকে বলে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে বৌদ্ধিক, আত্মিক সাহচর্যে।
        আজ সমস্যা হচ্ছে, মহানুভবের নিত্য ব্যবহার্য লোটাও শাশ্বত জীবনের ইঙ্গিতবহ বলে প্রচার হচ্ছে। এতে সুবিধা দুই। এক মহানুভবের কপট মহতী সঙ্গও হল, আবার তার বড় পরিসরের কথাটাকে বাদ দিয়ে তার ছোট পরিসরের কথাটাকেই বড় কথা বলে চালিয়ে দেওয়া গেল। এতে মঙ্গলের চাইতে লাভের দিকে ঝোঁক হল বেশি।
        আজ এক দুর্দিন। যে আলোতে মশাল জ্বালা যায়, সেই আলোকেই বাড়ির উনুন ধরানোর কাজে লাগিয়ে নিজের তুখোড় বিষয়বুদ্ধির গর্বে ফেটে পড়ছি, মাঝে মাঝে অন্যের চালে আগুন লাগাবার কাজেও প্রয়াস পাচ্ছি সে আগুনে। প্রতিদিন একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি, আমরা কেউ জিততে আসিনি, আমরা বাঁচতে এসেছিলাম - শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে, ঐক্যের মঙ্গলে, বৈচিত্রের মাধুর্যে। যেটাই মহানুভবের আকাঙ্খা। নামের মোহ নয়, প্রাণের জয়। পথ মহান হয় পথিকের দিশার মহানতায়, পায়ের জোরের উন্মাদনায় নয়।