সকালে ছাদে দেওয়া বড়িগুলো কে আনবে? আজই হাঁটুর ব্যথাটা এত বাড়তে হয়? সকাল থেকে কি রোদ্দুর! কাজের মেয়েটা ডাল বেটে দিল। তিনি নিজে ছাদে পা ছড়িয়ে বসে বড়িগুলো দিলেন। যে শাড়ির উপর দিলেন, সে শাড়িটা এ বছরেই ছিঁড়ে গেল। সে শাড়িতে সেদিনের সিঁদুরের দাগ লাগত। নাতিনাতনির হিসিতে ভিজেছিল কতবার।
তুমুল বৃষ্টি শুরু হল। জলের ঝাপটায় বিছানার চাদর ভিজে যাচ্ছে। তিনি সিঁড়ির কাছে গেলেন। এক পা-ও ওঠা সম্ভব হল না। সিঁড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলেন সিঁড়িঘরের টিনের চালার উপর অকাল বর্ষণের ধারাপাতের শব্দ। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। সব ঝাপসা। বাজ পড়ল খুব জোরে।
হঠাৎ সব মিলিয়ে কেমন হাসি পেল। এত কিছুর পরও বড়ির জন্য মায়া লাগে? মানুষের হৃদয় এত নির্বোধ হয়? তাতে বয়সের অভিজ্ঞতা পদ্মপাতায় পড়া জলের মত পিছলিয়ে যায়! কল্পনায় দেখছেন সমস্ত বড়িগুলো গলে গলে ভেসে চলে যাচ্ছে। রেনপাইপ দিয়ে পড়ে ড্রেনের জলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তারপর এ নর্দমা সে নর্দমা হয়ে নদীতে পড়ছে। তারপর সমুদ্রে।
পা ছড়িয়ে প্রথম সিঁড়িটায় বসলেন। ছোটোবেলায় মায়ের কাছে শেখা গান মনে পড়ল। খোলা গলায় গানটা শুরু করলেন..... ঝরঝর বরিষে বারিধারা....
ফাঁকা বাড়ির সমস্ত কোনায় নম্র শুভ্র পোশাকের আশ্বাসে এসে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথ। তার চোখ ভাসিয়ে তখন অকাল বর্ষণ।
হঠাৎ দরজায় ধুপধাপ আওয়াজ। গান থামিয়ে পা-টা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দরজা খুললেন। কাজের মেয়েটা। আদ্যন্ত ভিজে। ঘরে ঢুকেই বলল, মাসি, সব বড়ি যে ভেসে গেল...
উনি হাসলেন। ওর হাতটা ধরে বললেন, থাক, ভেসে যাক... তুই তো এলি... চা বসাবি?