সৌরভ ভট্টাচার্য
7 November 2018
অনেকটা রাস্তা চলে আসার পর বুঝল পাকা রাস্তাটা ছেড়ে গেছে অনেকক্ষণ হল। একটা জঙ্গলের মধ্যে অন্যমনস্কভাবেই চলে এসেছে অনেকটা। মাটিতে বসল। যাবে কোথায়? কোনোদিকেই যাওয়ার নেই। কিন্তু দাঁড়াবার জোও তো নেই। মানুষ মনের গুণে ঘুরে মরে। আমি কিসের খোঁজে ঘুরছি তবে? ঈশ্বরের মৃত শরীর দেখে এসেছি নিজের চোখে। পাথরের মত মৃত। আকাশের মত মৃত। ভাগ্যের মত মৃত। তবে কাকে খুঁজছি? না কি কাউকে খুঁজতে হবে বলেই খুঁজছি? নিজের থেকে পালাতে চাই।
সব মানুষ নিজের থেকে পালাতে চায়। নিজের মুখোমুখি হয় একমাত্র পাগল। সমাজ মানে নিজের থেকে দূরে থাকার সম্মিলিত চেষ্টা, কৌশল। নিজেকে নিজের থেকে দূরে রাখার। বেশি নিজের কাছে নিজে থাকলে পাগল হয়ে যায় মানুষ। যে মানুষ দিনে চোদ্দোবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় তাকে কোন মানুষ সুস্থ বলে?
মানুষটা মাটিতে শুলো। মাথাটা আকাশের দিকে। নীল আকাশ। একলা আকাশ। মানুষ নিঃসঙ্গ। পৃথিবীর মত নিঃসঙ্গ। তার কর্তব্যের মধ্যে নিঃসঙ্গতার ঘুঘুপাখির ডাক। সে কান চেপে হেঁটে চলে। একদিন থমকে পড়ে যায়। ঘুঘুপাখি কানের কাছে বলে চলে, "মন চলো নিজ নিকেতনে"। আবার মোহ। নিজের চারদিকে নিজের তৈরি মোহ। এ মোহ কুয়াশা। কুয়াশা যত ঘন হয় মানুষ তত উন্মাদ হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে, ভাব হয়, পাগল হয়। সে পাগলের পাগলামীতে কিছু মানুষের একাকীত্বের একঘেয়েমির অবসাদ কাটে। দল হয়। সম্প্রদায় হয়। লাঠালাঠি হয়।
মানুষটা চোখ বুজে ফেলল। চোখ বন্ধ করলে আশৈশব অন্ধকার। সে অন্ধকারে সিঁড়ির ঘর। ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া। নামতে নামতে ঘুরপাক খাওয়া। ঘুরতে ঘুরতে নেশা লাগা। চারদিকে আয়না আর আয়না। নিজের মধ্যে নিজের ঘোরে নিজেকে নিয়ে উন্মত্ত হয়ে পড়া।
মানুষটা হঠাৎ তড়াক করে উঠে বসল। শান্ত হয়ে চারদিকে তাকালো। মাটিতে হাত বুলালো। নিজের মুখে চোখে হাত বুলালো। শারীরিক উত্তেজনা, কাম। না সে না, সে আরেক ঘোর। ঘুরে ফিরে আবার সেই আয়নার সামনে, শরীর নিয়ে। রাতদিন নিজেকে দেখা, শরীরকে দেখা, কামের বাজারে নিজের শরীরের মাপ নেওয়া, উত্তেজনার মাপ নেওয়া, নিজের দর মাপা। এও না, এও না। সেও ঘোর, আরেক ঘোর।
শৈশব না, যৌবন না, বার্ধক্য না - মানুষী বোধ নিয়ে কথা। বোধ কি? পাথর না নদী? সমুদ্র না আকাশ? পাতা না শিকড়? স্রোত না স্থবিরতা?
মানুষটা উঠে দাঁড়ালো। বোধ মানে কি? চলা? মাটির উপর বিশ্বাস রেখে পা ফেলা?