রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন "চেতনা জড়ায়ে রহে ভাবনার স্বপ্নজালে"।
বহু বছর পর শঙ্খ ঘোষ লিখলেন, "মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে"।
এখন হচ্ছে, মাথা ঘেঁটে যায় বিনোদনে।
ক্রমশ সব বিনোদন ডায়াবেটিক হয়ে যাচ্ছি। ডায়াবেটিস হলে যেমন বারবার হিসি পায়, বারবার তেষ্টা পায়, মেলা ক্লান্তি লাগে। তেমন বারবার নেট পিপাসা পায়। বারবার ক্লান্তি লাগে। এখানে সবটাই বড় বিনোদনের। খুন থেকে দুর্নীতি, সবের মোড়কই বিনোদন। তারকাদের অন্তর্বাসের অভ্যন্তরগমন, সেও আছে। সব মিলিয়ে ডায়াবেটিক হয়ে যাচ্ছি। যেদিকে তাকাই শুধু বিনোদন। স্যাটায়ার নাই। হিউমার নাই। শুধু চড়া দাগের বিনোদন।
এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা….
ধরা যাক একটা বড় বৃত্ত। বিশাল বড়। তার কেন্দ্র থেকে পরিধি অবধি রাস্তা টানা গোল গোল। এখন আমার কাজ কি? কেন্দ্রের দিকে আরো সরে আসা, না পরিধির দিকে সরে সরে যাওয়া? নাকি কেন্দ্র আর পরিধির মধ্যে একটা সহজ যাতায়াতের রাস্তা বানিয়ে ফেলা?
সমস্যা হল প্রথমে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কেন্দ্র আছে। তারপর ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কেন্দ্র থাকলেও সেখানে যাওয়ার পথ আছে। তারপর বলা হচ্ছে কেন্দ্রের চাইতে পরিধিতে খ্যাতির সুখ অনেক। কেন্দ্রে কিস্যু নাই। কেউ দেখে না। জ্যান্তে মড়া হয়ে বেঁচে লাভ কি? তুমি কি অসুস্থ যে রাতদিন শান্তি চাই… শান্তি চাই বলবে?
অর্থাৎ শান্তির চাহিদাটা হল বিকার। ভ্যাকেশান চাও, শান্তি আবার কি? কম্ফোর্ট চাও, হারমনি আবার কি? অতি স্ট্রাগলের মহিমা গাও, সার্থকতা আবার কি? তবে জীবনে পাবটা কি? বিনোদন!!! আপনার মৃত্যু অবধি বিনোদন সাজানো আছে। সাজিয়ে দিচ্ছি আমরা। আসুন মেতে উঠুন। ওসব কেন্দ্রটেন্দ্র বলে কিস্যু নাই। পরিধিই সব!
তবু বিবেকী মন মাঝে মাঝে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে, এই যে সব চরকির মত ঘুরছে….. সত্যিই কি কোনো কেন্দ্র নাই? কোনো ঠাঁই নাই?
আছে আছে। কিন্তু বিনোদন ডায়াবেটিক ক্লান্ত মন, বারবার নেট পিপাসার্ত, বারবার রিল-শর্টসে টয়লেটের মত যেতে যেতে বলে, থাকলেই কি হবে ভায়া…. মোর শকতি নাহি উড়িবার…..
ওদিকে কে যেন ডেকে যায়, বেলা যে পড়ে এলো…. 'ঘরপানে' চল….