আমার বইয়ের আলমারিরর সামনে এক ভদ্রলোক দাঁড়ালেন। বাবার বন্ধু। তখন একখানাই বইয়ের আলমারি সম্বল। তার মধ্যে আমার প্রাণ ভোমরারা।
ভদ্রলোক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বইগুলো দেখছেন। পাতা ওল্টাচ্ছেন। আবার জায়গায় রেখে দিচ্ছেন। আমি বেশ উৎসুক হয়ে আছি, প্রশংসা তো শুনবই তার সাথে হয়ত কিছু নতুন বইয়ের সন্ধানও পাব। কিম্বা হয়ত চাইতেও পারেন কোনো বই, তখন কি করব, দেব? না পাশ কাটিয়ে যাব ঢপ দিয়ে। মাথায় এরকম সব চিন্তারা ফুটছে আর ডুবছে।
উনি বই দেখা হলে চেয়ারে বসলেন। আমি সামনে। বাবা স্নানে। মা চা দিয়ে গেলেন। সাথে কিছু একটা ভাজা। উনি একটা ভাজা মুখে পুরে চোখ বন্ধ করে চিবোতে চিবোতে বললেন, বইগুলো ভালই....তবে...
খটকা লাগল। তবে? এর মধ্যে আবার তবে কোত্থেকে?...
চোখ খুলে বললেন, তোমার বাবা যখন জমি কিনেছিলেন, আর এখন যা জমির মূল্য হয়েছে....
আলমারির দিকে তাকালেন। আমি ভেবলে গেছি...বই...জমি...মূল্য...বাবা....ঘেঁটে যাচ্ছি। উনি বাক্যটা পুরো করবেন বলে, একটু ঝুঁকে আমার দিকে এগিয়ে এলেন...না না আমার দিকে না, চায়ের কাপটা নিয়ে আবার চেয়ারে হেলান দিলেন। বললেন, এবার চোখ খুলেই বললেন,
তোমার এই বইয়ের আলমারি আর তাতে রাখা বইগুলোর যা দাম, তা কি যত স্কোয়ার ফিট জুড়ে আলমারিটা অক্যুপাই করে আছে জমি, তার কাছাকাছি হবে?.....
বলেই সুড়ুত করে চায়ে চুমুক দিলেন। চোখ বন্ধ করে আমার উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলেন...ঠোঁটের কোণে পানিপথ বিজয়ের হাসি....
প্রথমে খানিকটা ঘেঁটে গিয়েছিলাম, তারপর মাথাটা গরম হতে লাগল, মনে মনে বললুম...*****
আরেকবার, যখন ওনার প্রতিভা সম্বন্ধে আমি জ্ঞাত, মোহরদি টিভিতে গাইছেন, উনি মোহরদির পরা শাড়িটার সরব মূল্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন..আমি মনে মনে আবার বললুম..******
মানুষটার যখন বাবা মারা গেলেন, আমি ধন্দেই পড়লাম, এবার আবার নতুন কি বলবেন।
ভদ্রলোক কাঁদলেন না। শুধু বারবার বলতে লাগলেন, ইস আর দু বছর যদি বাঁচতেন,
কি হত কাকু?
পেনশানটা ডবল হত....
এবার সত্যিই কেঁদে ফেললেন। আমি ওনার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললুম...****