Skip to main content

বিশ্বাসঘাতক ১

=================

একটা পোষ্য মানুষ থাক। যাকে নিয়ে খেলব। রাগাবো। চুমু খাব। আদর করব। অল্প অল্প ব্যথা দেব। আমার ভালোবাসা হয়ে এমন একজন পোষ্য মানুষ থাক।

এত অল্পই চেয়েছিল সে জীবন থেকে। শুধু এইটুকু সুখ। তাকে ঘিরে থাকুক, একজন অন্তত পোষ্য মানুষ। যে তাকে শুধু সুখ দেবে। যে আগুন ছুঁড়লে দেবে গোলাপের মালা। পাথর ছুঁড়লে দেবে জুঁইফুল বানিয়ে।

হল না। ব্যর্থ হতে শুরু করল জীবন। যে মানুষটাকে বানাতে এত এত টাকা খরচ হল, এত এত পরিশ্রম গেল বছরের পর বছর, সে একজন পোষ্য মানুষ পাবে না জীবনে! বাবা মা শুধু না, আত্মীয়স্বজন সবাই মুষড়ে গেল।

মানুষ এলো ঘরে। ভালোবাসার মানুষ। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে, কয়েক শত মানুষকে রাক্ষুসে ভোজ গিলিয়ে। তবু ভালোবাসা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হল। মানুষটা কেন পোষ্য হল না! এমন তো কথা ছিল না!

সানাই বিশ্বাসঘাতক হল। পুরোহিত বিশ্বাসঘাতক হল। মন্ত্র বিশ্বাসঘাতকত হল। গাঁটছড়া বিশ্বাসঘাতক হল। হৃদয় শিকার হল। সমাজ হল চতুর শিকারী।

যে পোষ্য হয় না, সে বালাই হয়। সে গলগ্রহ হয়। তার নূপুরের ধ্বনি যুদ্ধের দামামা। তার স্নিগ্ধ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর উদ্ধত, উগ্র। তার স্বচ্ছ চাহনির মধ্যে অতল ঘূর্ণী।

তবু তাড়ানো গেল না যখন, উপায় কি হবে? নিজে পোষ্য হই যদি? ঘরে অন্তত একজন পোষ্য থাকুক! নইলে দাঁড়াই কোথায়? ভালোবাসার চাবুকে সায়েস্তা যদি না করতে পারি, নিজে চাবুক সহ্য করি! চাবুকের অপচয়ে সংসার চলে কি করে!

সে পোষ্য হল।

মেয়েটা বলল, চাইনি এ আমি।

ছেলেটা বলল, বিনয়ের অহংকার! এও জানো! অহো, ভাগ্য তোমার! হে ছলনাময়ী!

 

বিশ্বাসঘাতক ২

=================

সানাই বাজল। সুর শুনতে পেলো না। প্রচুর হুল্লোড়, আমোদ হল। আনন্দ পেল না। জীবনসঙ্গী এলো, জীবন এলো না। শরীর জাগল, প্রাণে ঢেউ উঠল না। ঠোঁটের উপর ঠোঁট ঠেকল, চুম্বন হল না। আলিঙ্গনে আষ্টেপৃষ্টে গেল গেল শরীর, তবু ভরসা জাগানো শান্তি এলো না।

কি করে সে? দরজায় দরজায় আঘাত করে বলতে শুরু করল, আহা, কি আমার পৌরুষ দেখো… দেখো কি সুখী আমি… দেখো এই আমার পরিবার…. দেখো সফল হল জীবন…. সমাজ মুকুরে আমারই ছবি শুধু…. দেখো দেখো দেখো…. তাকাও….

সাড়া পেলো না। মান পেলো না। অভিমানী বিষাদ জন্মালো ধমনীতে, স্নায়ুতে। সরে এলো সবার থেকে। এখন শুধু কাজ আর কাজ। কাজই সুখ। সুখই মরীচিকা। গোটা সমাজ বিশ্বাসঘাতক। সব পুরুষ, সব নারী বিশ্বাসঘাতক। ছল শুধু। সব ছল। সব চাইতে নিষ্ঠুর ছল বিধাতার! নইলে পুরুষের হৃদয়ে পুরুষের তৃষ্ণা! ছি! বিশ্বাসঘাতক, নিজের কাছে নিজেই সে