সুখ একটা বিশ্বাস। বিশ্বাস করলে আছে, না করলে নেই। তুমি সুখ খুঁজবে কোথায়? এই পাড়, ওই পাড়, হালে, বৈঠায়, স্রোতে... আসলে সুখ নেই কোত্থাও। সুখ মানে বিশ্বাস।
লটারির টিকিটগুলো সাজিয়ে, মা তারা, লোকনাথ বাবার ছবিতে ধূপ দিয়ে যে লোকটা চেয়ার পেতে বসল, সে সুখ বিক্রি করবে এখন। যে কাটবে, সে বিশ্বাস করবে, হয়তো এবার ভাগ্য ফিরবে। এই বিশ্বাসেই তার সুখ। টাকা পেলেই যে সুখী হবে, সে এখনও নিশ্চিত জানে না তো। তবু সে কিনবে। সে বেচবে সেও জানে না তার টেবিলে কার ভাগ্যের সংখ্যা রাখা। তার বিশ্বাস কেউ না কেউ পাবে। নইলে এর তার চোখের দিকে তাকাতে এলেম লাগত।
মন্দিরে নামসংকীর্তনের পর, কপালে চন্দনের ফোঁটা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দল প্রসাদের বাতাসা মুখে পুরে গঙ্গায় নামল হাত ধুতে। তাদের বিশ্বাস এ সংসারে তারা ব্রাত্য নয়। গোবিন্দ দাঁড়িয়ে আছে পাড়ে, ওই কাঠের নৌকার মত ভালোবাসার নৌকা নিয়ে। তারা চোখ বুজলেই, গোবিন্দ তাদের নাম ধরে ডেকে ডেকে নিয়ে যাবে। সব ক্ষোভ মিটে যাবে। নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই তো। যা যা না পাওয়া থেকে গেল, সেই কষ্টগুলো তারা ভুলে যাবে। এমনই মহিমা গোবিন্দের প্রেমে। এ বিশ্বাস। গোবিন্দ সবার নাম জানে।
বিশ্বাস বড় একার ধন। শিশিরের মত বিন্দু বিন্দু জমে একলা কুঁড়ির গায়ে। ওই যে বাচ্চাটা বাবার হাত ধরে গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে কুকুরটাকে বিস্কুট দিচ্ছে আর বকাবকি করছে। ওর বিশ্বাস কুকুরটার ভাষা আর তার ভাষা এক। তার বিশ্বাস বাবার হাতটা ছেড়ে যাবে না কোনোদিন। ছেড়ে গেলেই সে কাঁদে। অমনি বাবা আধখানা খাওয়া বিড়িটা ফেলে দৌড়ে এসে কোলে নেয়। এ বিশ্বাসের কান্না। বিশ্বাস আছে বলেই মানুষ কাঁদে। নইলে শুধু গাল গড়িয়ে জলের স্রোত বইত কার জন্য? এ তো ঘাম নয় যে শরীর ঠাণ্ডা হবে বাতাসে মিশে। এ হৃদয় শীতল করার উপায়। এ বিশ্বাস।
বিশ্বাস মানেই সুখ। ওই যে ছেলেটা মেয়েটাকে বাইকে নামিয়ে বলল, কাল এখানেই দাঁড়াস। এও তাই। আগামীকাল তাদের জন্যেই। মেয়েটার এখানে দাঁড়ানোর জন্যেই। বিশ্বাস এমন অসম্ভবী আবদার।
এই টুকরো টুকরো বিশ্বাসগুলো জমে জমেই জীবনের স্রোতে জোয়ারভাটা খেলে। কখনও পাড়ে নৌকা বাঁধলে, কখনও খুলে দিলে। শুধু বিশ্বাসটুকু মাখা থাকলেই হল। ওতে যন্ত্রপাতি কিছু বদলাবে না, শুধু যন্ত্রপাতির ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ একঘেয়ে আওয়াজটা কমে যাবে।