কিশোরবাবুর বয়েস পঞ্চান্ন। সুচাকুরে। নিজের বাড়ি। বাড়ি মধ্যমগ্রাম। স্ত্রী ঘরোয়া। সুশ্রী। ভক্তিপরায়ণা, স্বামী - ঈশ্বর দু'দিকেই। ছেলে আমেরিকায়, কর্মরত। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
কিশোরবাবু বাড়ির ব্যালকোনিতে বসে। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। ছাঁটটা উল্টোমুখো। পায়জামার নীচের দিকটা ভিজছে। ফতুয়াটা ঝোড়ো ভেজা হাওয়ায় দুলছে যেন। রবিবারের সন্ধ্যে। ফাঁকা রাস্তাঘাট। কিশোরবাবুর মন অতীত নিবাসী। কিশোরবাবুর প্রেমের সংখ্যা হাতের এক কড়ে আঁটে না। অবশ্যই বড়ো বয়সের প্রেমগুলোর কথা। কলেজ ধরলে তো ইতি করা দায় হবে।
কিশোরবাবু প্রেমিকাদের মুখ স্পষ্ট মনে করতে পারেন না। এর নাক, ওর চোখ, তার ভ্রু, কার দাঁতের উজ্জ্বল পাটি - মিলেমিশে সব একাকার হয়ে যায়। কেউ কেউ অবশ্য খুব স্পষ্ট। ফেসবুকে এরা আছে অনেকেই। কিশোরবাবুও আছেন। ওরা আছে, মানে বেঁচে আছে ভাবলে কিশোরবাবুর হিংসা হয়। রাগ হয়। আবার উদাসীনতাও আসে। বয়েস শরীরের বাড়ে। স্বভাবের বাড়া-কমা হয় কি? স্বভাব রং বদলায়, চরিত্র না।
কিশোরবাবু ডেকে দেখেছেন। সেরকম সাড়া কই? চুলে ডাই করেন। শরীর পটু মোটামুটি এখনও। কিন্তু তার শরীর মন যেন বীথির জন্য তৈরি হয়নি। বীথি বাবার পছন্দ ছিল। তার না। কি যে দেখল বাবা ওর মধ্যে? শালা নিজে এক গেঁয়ো ভুতকে নিয়ে সারাজীবন কাটাল। তার ঘাড়েও দিয়ে গেল আরেকজন গেঁয়ো ভুত। ভুত না, থুড়ি, পেত্নী।
কিশোরবাবু উঠে দাঁড়ালেন। বৃষ্টির জলে হাত দিলেন। হাত ভিজল। বিরক্ত লাগল। বীথিকেই বিরক্ত লাগে। বড্ড বাধ্য। নিজস্বতা নেই। সেক্স যেন শালা অ্যানিমাল সেক্স করা! মানুষ অত ঠাণ্ডা হয়?!
বুকের বাঁদিকটা ব্যাথা হচ্ছে দুপুর থেকে। অ্যান্টাসিড খেলেন তো খানিক আগে। কমছে না। প্রেসারটা বাড়ল কি? নিজের পুরুষাঙ্গে হাত রাখলেন। সারা শরীরে একটা তীব্র আলোড়ন হল যেন। মনে হল এখনি গিয়ে গলাটা টিপে মেরে ফেলে আসে মেয়েছেলেটাকে! মাথার পিছনে জানলা। পর্দাটা সরালেই মূর্তিমান অসহ্যকর মানুষটা। সিরিয়াল দেখছেন। ওই দেখুক। শালা মিডিওকার মাইন্ডসেট যত! ইরোটিকা দেখলে গা ঘিনঘিন করে তার। শালা নেকি খানকি একটা! সব শেষ করে দিল!
ঘাম হচ্ছে। শ্বাস নিতেও বুকটা চাপ চাপ লাগছে। বাঁ কাঁধ থেকে একটা ব্যাথা হাতের দিকে চাগাড় দিচ্ছে। রথীনকে ফোন করবে? পিজির ডাক্তার। তার বাল্যবন্ধু। থাক। আরেকটু দেখা যাক। পেচ্ছাপ পাচ্ছে। উঠতে ইচ্ছা করছে না। বসে রইলেন। বীথিকে ডাকবেন?
বুঝলেন এটা আইসিইউ। কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে। কয়েকদিন পর জেনারেল বেডে দিল। কেবিনে। বীথি যাতায়াত করছে। কিশোরবাবুর অসহ্য লাগছে। বাড়াবাড়ি। এতদিন যা সুখে রেখেছেন ওকে সেটা ও ডিজার্ভ করে? করে না। শুধু বাবার জন্য! পাশ ফিরে শুলেন। বিরক্তিটার সাথে থাকা অভ্যাস হয়ে গেছে।
- এখন কেমন লাগছে?
- ভালো। তুমি টাকা পয়সার হিসাব নিজে সামলাচ্ছো? না বাবু?
- ও ফিরে গেছে। একদিন ছিল। অফিসের কি দরকার?
কিশোরবাবুর ভ্রু কুঁচকালো।
- মামণি?
- আসতে পারেনি গো। ওর ছেলেটার ফাইভে অ্যাডমিশান..
- আচ্ছা। আচ্ছা।
- তোমার ফোনে কয়েকজন মহিলা ফোন করেছিলেন। আমি চিনি না। তোমার খোঁজ নিচ্ছিলেন।
কিশোরবাবু প্রথমটা থতমত খেলেন। তারপর প্রতিশোধে জিতে যাওয়ার মত একটা সুখ পেলেন।
- হুম। জানি।
- যাক গে, তোমায় সামনের সপ্তাহে ছেড়ে দেবে বলছিল।
- ওদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল
- হুম, বাবু বলেছে। তোমার ফেসবুক থেকে আন্দাজ করেছে।
কিশোরবাবুর অস্বস্তি লাগছে। বাবু!
- দেখো, প্রয়োজনের থেকে প্রেমটা আমার কোনোদিনই বেশি মনে হয়নি। তুমি কোনোদিনই আমায় নিয়ে সুখী নও। আমিও নই। সুখটা বড় কথা নয়। শান্তিটা বড়। সেটাতে তুমি আমি সফল। কিছু তো পেয়েছি।
- আমি সেটাও পাইনি।
- সেটা তোমার নিজের দোষে। কিন্তু অশান্তিতে থাকার মত কিছু করিনি কোনোদিন আমি। তুমি সেধে এনেছো।
কিশোরবাবু বিরক্ত হচ্ছেন। পুরোনো বিরক্তিটাই। শান্তি মানে কি? বুকের বাঁদিকটা চিনচিন করছে। গ্যাসের ব্যাথা?
- একবার ডাক্তারকে ডাকো তো