বাগানে নানান ফুলগাছ। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ক্যাকটাস গাছ জন্মালো। অন্য গাছেদের ভুরু কোঁচকাল, নাক উঁচু হল। বেশ কিছুদিন কাটল। সব গাছে ফুল ফুটল। গোলাপ, রজনীগন্ধা, জুঁই, জবা আরো কত কি। শুধু ক্যাকটাস থাকল ফুলহীন। অন্য ফুলগাছেরা ক্যাকটাসের দিকে তাচ্ছিল্যভরে তাকালো। বলল, শুধুই কাঁটা? আহা বাছা থাকো কি করে! ক্যাকটাস হাসল শুধু।
দিন গেল। হঠাৎ একদিন ক্যাকটাসের গায়ে দেখা গেল একটা কুঁড়ি। সবার চক্ষু নাসিকা কুঞ্চিত হল। তবে?
আরো কয়েকদিন গেল। সব্বাইকে তাক লাগিয়ে সত্যিই ফুটল এক আশ্চর্য ফুল। তার কি রং, কি উজ্জ্বলতা! সব্বাই এক্কেবারে চুপ।
জুঁই একদিন প্রজাপতিকে ডেকে বলল, তুই যাস ওই ক্যাকটাস মুখপুড়িটার কাছে?
প্রজাপতি হেসে বলল, হ্যাঁ গো যাই তো, কেন?
ভ্রমর বলল যাই, দু'চারটে কীটও বলল তারাও যায়।
ফুলগাছগুলো বলল, মর গে!
সময়ের সাথে সাথে সব স্তিমিত হয়ে আসল। পুরোটা না, তবে অনেকটা।
একদিন খুব ঝড় উঠেছে। খুব ঝড়। বড় বড় গাছগুলো মড়মড় করে এই ভাঙে তো সেই ভাঙে। গোলাপ, জুঁই, জবা আতঙ্কে জড়োসড়ো। হঠাৎ এই ঝড়ের মধ্যেও তারা শুনতে পেল একটা গুনগুন স্বর। ক্যাকটাস গান গাইছে! একবার আক্কেলটা দেখো, আরে খানিক বাদে বাঁচবি কি মরবি জানিস না, এর মধ্যে তোর গান আসে কি করে রে হতভাগী?
ক্যাকটাস বলল, আসে। আমি জন্মেছিলাম সেই মরুভূমির দেশে দিদি। সেখানে না ঝড়, না জল। ঝড় হলেও তার এমন মত্ত রূপ নয় গো। সে বালিতে বালিতে অন্ধ। আর এখানে দেখো, ওই বড় বড় গাছগুলোকে দেখো, যেন কি আনন্দে সব ক্ষেপে উঠেছে, মরবারও যেন ফুরসত নেই গো!
- আ মর! তোর মরার ভয় নেই বুঝি?
- না দিদি, সে থাকবে না কেন? তবে মরার আগে তো বাঁচতে হবে? না হলে মরণ এসে নেবে কি? আর এমন ঝড় দেখলেই যে বাঁচবার সাধটা হু হু করে জেগে ওঠে দিদি, আমার শিকড়ে, বুকে, কাঁটায় সে যে কি উত্তেজনা তোমাদের যদি দেখাতে পারতাম!
বলে সে কি আবেগে উত্তেজনায় গলা ছেড়ে গান গাইল।
এদিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। গোলাপ, জুঁই, জবা খেয়ালই করেনি কখন ঝড় কমে জল শুরু হয়েছে। তারা মুগ্ধ হয়ে ক্যাকটাসের দিকে তাকিয়ে। ক্যাকটাস গান গাইছে, ঝড়ের গান, প্রাণের গান। গোলাপ মাথা নাড়ছে, জুঁই গুনগুন করছে, জবা উদাস হয়ে দূরে তাকিয়ে।
প্রজাপতিটা তার বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে একটা পাতার আড়ালে বৃষ্টি দেখতে দেখতে বলল, বেঁচে থাক ভাই ক্যাকটাস, আমার বাচ্চাটা যেন তোরই মত হয়। নীচের পাতা থেকে একটা সবুজ পোকা বলল, যা বলেছিস বোন, ভয়ে ভয়েই সারাটা জীবন কাটল, ঘেন্না ধরে গেল এমন বাঁচায়। তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক, আর পড়ুক ক্যাকটাসের গলায়।
(ছবিঃ সুমন দাস)