সৌরভ ভট্টাচার্য
6 January 2020
অমর্ত্য সেনের পর এবার অভিজিতবাবুকে নিয়ে - দেশে থাকুন, তবে মতামত দিন।
বাছারা আমার কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিই -
রামকৃষ্ণ বিখ্যাত হলেন, স্বামীজির মত শিষ্য ছিলেন বলে। স্বামীজি বিখ্যাত হলেন শিকাগো (বিদেশ) নামে একটা জায়গায় সাদা চামড়ার বাহবা পেয়েছিলেন বলে। আমি হলফ করে বলতে পারি আপনারা দশখণ্ড স্বামীজি রচনাবলী এখনও পুরোটা পড়েননি, পড়লে ওনার ছবি, আর বাছাবাছা উদ্ধৃতিগুলোর অপব্যবহার করতে ভয় লাগত।
রবীন্দ্রনাথ = নোবেল= বিদেশ = সাদা চামড়ার বাহবা। সেই বিখ্যাত ভাষণ ওনার মনে আছে? যখন এক ট্রেন লোক মিলে ওনাকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিল। অগত্যা....
সত্যজিৎবাবু = অস্কার = বিদেশ = সাদা চামড়ার বাহবা।
ওহে দেশপ্রেমীগণ, বিদেশ হইতে কল্কে না পাইলে যে দেশের সন্তানেরা দেশজ প্রতিভা চিনিতে, বুঝিতে অক্ষম হয়, সেই দেশের মানুষের আর যা হোক 'বিদেশ বিদেশ' বলিয়া গাল পাড়া খুব একটা সমীচীন কিছু কি?
সত্যার্থী মহাশয়কে নোবেল পাওয়ার পূর্বে ক’জন চিনিতেন দেশপ্রেমীগণ?
আসলে 'দেশ' আর গ্রাম বা পাড়া শব্দটার মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা এক বিশেষ শ্রেণীর দেশপ্রেমীগণ ভুলতে বসেছেন। দেশ বলতে তারা গ্রামের ছেলে বা পাড়ার ছেলের অধিক কিছু বুঝে না। তাই তাদের অভিযোগের সুর খানিকটা এমন - "পাড়ায় থাকো না, পুজোয় চাঁদা দাও না, অমুকের ঠাকুমা মারা গেল যখন শ্মশানে গেলে না, আমাদের সাথে ক্লাবে আড্ডা মারতে আসো না, নাচো না, গুলিডাণ্ডা খেল না, ওপাড়ার মানুষদের উচিৎ শিক্ষা দিতে ডাণ্ডাবাজি করো না....ধুস, তুমি কোন কামের?"
এদের ধারণা রাশিয়া, আমেরিকায় চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ে ভারতীয়ের হৃৎপিণ্ড, যকৃত, পাকস্থলী, বৃক্ক ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা হয় না। এদের ধারণা সংস্কৃতে যাই বলা হয় তাই শাস্ত্র। এদের ধারণা ভারতের মাটি সূর্যের থেকে ছিটকে আসা পৃথিবীনামক গ্রহের নয়, সে অসীম অনন্তকাল থেকে এক বিশেষ পূর্ণ, নিখুঁত, সম্পূর্ণ অবস্থানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। এরা ব্যাখ্যা করে, খোঁজ করে না। এরা নিন্দা করে, সমালোচনা করে, কুৎসা করে কিন্তু নিজেকে নিয়ে কোনো সংশয় তথা আলোচনায় যায় না। এরা নির্দিষ্ট শত্রুপক্ষের অস্তিত্ব, পরিচয়ের চালচিত্রে নিজের ক্ষমতার বহর খোঁজে। এরা সৃষ্টি করে না, গ্রহণ করে না, শ্রবণ করে না। এদের জ্ঞান মিউজিয়ামের। এদের স্বপ্ন অতীতকালের। এদের ভালোবাসা বুড়ো বটগাছের ঝুরিতে লটকে। এদের অর্থনীতি জবরদখলের। এদের রঙ, ধর্ম, ঈশ্বর, মতামতের একটাই গর্ব-আস্থা-বিশ্বাস; প্রাচীনত্বে।
থেমে যাবে সব। তবে পুরোনো পাথর আচমকা কালের বেগে গড়িয়ে নামছে তো, কিছু ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই। মেনে নিতেই হবে। মনে রাখতে হবে পাথর যখন গড়ায় তখন তার প্রবল বেগ থাকে, দিশা থাকে না। তবে আবার কালের নিয়মেই কোথাও গিয়ে জগদ্দলত্বপ্রাপ্ত হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সেইদিনের।