পেটে অসহ্য ব্যথা, পাড়ার ছেলে, ছুটলাম নিয়ে হাস্পাতাল। রাত দুটো। জওহরলাল হাস্পাতালের ইমারজেন্সী। ওকে ভর্তি করে নিল। গরমকাল, আমরা ঠিক করলাম একটু দেখে নিয়ে ফিরব। সবার বাইক আছে প্রবলেম হবে না।
আমি খাবার জল কিনব। বাইরে এলাম। রাস্তার উল্টোদিকে সারসার দোকান। সবই প্রায় বন্ধ, একটা কি দুটো খোলা। একটা দোকানে গিয়ে দুটো জলের বোতল কিনলাম, গুমোট গরম। লোকটা চেঞ্জ আর দিতে চায় না, গল্পে মশগুল। একটা হাফপ্যান্ট পরা লোক গল্প বলছে, দোকানী আর তার কর্মচারী হাঁ করে গিলছে। লোকটার বলার মধ্যে কিছু একটা তো ছিল। আমিও দাঁড়ালাম। সে মর্গে কাজ করে।
আরে মাইরি বলছি..****। শীতকাল, আরে আমারই সামনে বডিটা ঢোকালো... আমি চিনতাম মালটাকে... আমাদেরই পাড়ার... গলায় দড়ি দিয়েছিল... বউটার সাথে কি ক্যাঁচাল ছিল....
কর্মচারী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, বসে যান দাদা.... হেব্বি.. লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে মাইরি...
আবার গল্পে ঢুকলাম। বসেই পড়লাম কখন নিজের অজান্তে...
আমি ঢুকেছি, হঠাৎ মনে হল ওর বেডে ও নেই.... আমার স্পষ্ট মনে আছে তখন রাতের শেষ কল্যাণী লোকালটা বেরোচ্ছে ডাউনে... যা হোক, ওর বেডের কাছে দাঁড়িয়ে দেখছি... মনে মনে ভাবছি ডাক্তারেরা এতটা ভুল করল.. শালা জ্যান্ত মাল মর্গে ঢুকিয়ে দিল?
ফিরতে যাব, কিসে একটা হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বাঁচলাম... দেখি মেঝেতে শুয়ে পটকাদা.. মানে ওই পাড়ার মালটা.. মড়াটা... ঝাঁট জ্বলে গেল আমার.. কে এই মালটাকে তুলে আবার বেডে শোয়াবে..... যা হোক একটু সরিয়ে তো দিতেই হবে... কিন্তু যখন এলাম তখন ছিল না তো.. আমার ওসব ভয়ডর নেই... তবু গা'টা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠল.... নীচু হয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখি হাতটা গরম.... মাইরি আমার তো ইয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়... **** .... উঠতে যাব হঠাৎ পটকাদার সেই হিসহিস করে হাসি শুনলাম যেন আমার পিছন থেকে... আমি আর কোনোদিকে না তাকিয়ে দৌড়...
(আমি বোতল খুলে জল খেলাম, শালা ঢপ দেওয়ারও তো একটা লেবেল থাকে মাইরি)
তারপর হল কি, যেখানেই যাই দেখি পটকাদা দাঁড়িয়ে, কেউ দেখতে পাচ্ছে না.. আমি পাচ্ছি.... লিফটে.. টয়লেটে... এই তোদের দোকানে.... ওই তো ওই চেয়ারটার পিছনে দাঁড়িয়ে এখন.....
এমন আচমকা গল্পটা সামনে এসে দাঁড়াবে বুঝিনি.... হাড় হিম করা দৃষ্টি নিয়ে গল্পবলা মানুষটা সামনে তাকিয়ে.... দোকানী আর তার কর্মচারী আমার দিকে এগিয়ে এসে.. ধুর.. **** বলতে না বলতেই... দোকানের এক থাক ওষুধ চোখের সামনে হুড়মুড় করে পড়ে গেল তাক থেকে...... আমরা ছিটকে বাইরে... কর্মচারীটা "এই লেটো বাইরে আয়.. আয়" বলতে বলতে দৌড় লাগালো.. আমি আর দোকানী কখন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে বুঝিনি.. লেটো স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে... দোকানের সামনেটায় আমার জলের বোতল দুটো... চেঞ্জটাও পেপারওয়েট চাপা দিয়ে রাখা..
কিছুক্ষণ পর লেটো চলে গেল মাথাটা নীচু করে গোঁ গোঁ করতে করতে। আমি বোতলদুটো নিয়ে হাঁটা দিলাম... দোকানী ঝাঁপ ফেলছে দেখলাম...
গেটের কাছ অবধি এসে ডানদিকে ঘুরেছি হঠাৎ পিছন দিক থেকে কে বলল, চেঞ্জটা আপনার... আমি স্থির দাঁড়িয়ে.... এটা না দোকানীর গলা, না কর্মচারীর.. না লেটোর... সামনের কুকুরগুলো পরিত্রাহি আমার দিকে তাকিয়ে ডাকছে... আমি বুঝতে পারছি আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে....
(ভূতচতুর্দশী বলেই বললাম.. নইলে এসব অভিজ্ঞতা কেউ লেখে?... ভালো থাকবেন, আলোকিত থাকবেন, অন্ধকারের বাসিন্দাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ হলে বোঝাপড়া করে নেবেন.. ভয় পাবেন না... ভুলে যাবেন না ওরাও এককালে মানুষ ছিল...)