Skip to main content

মানুষটা ধীরে ধীরে ভুলে গেল, দস্তুরমত ভুলে গেল,

তার সামনে এমন মিষ্টিগন্ধ ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ আসত না, এমন রংবেরঙের গরম জামা থাকত না, এমন সুইচ টিপে ঘর ঠাণ্ডা-গরম করার মেশিন ছিল না, এমন জল গরমের যন্ত্র ছিল না, এমন হাত-পা ছড়িয়ে বসার অবকাশ ছিল না....

তার মনে হত এগুলো তো আজীবন ছিল....

ক্রমশ সে অভ্যস্ত হয়ে গেল। তার সুখ কমে আসতে আসতে আবার সুখের তেষ্টা বাড়তে লাগল। তার চারদিকে বাজারে লেগেছে নতুন বসন্ত। অথচ তার চারদিকে কই সে নতুন বসন্তের সাজ? সে সুখী হতে হতে, অভ্যস্ত হতে হতে, ক্ষুব্ধ হতে শুরু করল। নিজেকে আবার মনে হল - বঞ্চিত। বঞ্চিত যেন সে আজীবন।

তাকে ডাকছে নতুন বসন্ত। বাজারে এসেছে তারই জন্য। এ সবই তার জন্যেই সৃষ্টি। পৃথিবীর সব সুখ শুধু তারই জন্য তো সৃষ্টি। সে ক্ষুব্ধ হতে হতে বাজারে এসে দাঁড়াচ্ছে বারবার.... সেই অজানা উদ্বেগ!

======

মানুষটা ধীরে ধীরে ভুলে গেল, দস্তুরমত ভুলে গেল,

একদিন সে ভীষণ কেঁদেছিল। একদিন তার গোটা জগত শূন্যবোধ হয়েছিল। একদিন পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে গিয়েছিল। একদিন বেঁচে থাকার কম্পাস খাট আর দেওয়ালের মাঝে সুক্ষ্ম ফাঁকে গড়িয়ে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল।

তার মনে হতে শুরু করল কোনো বড় দুঃখ পায়নি সে আজীবন। আসল বড় দুঃখটা এখনও আসেনি। সামনে কোথাও, লুকিয়ে আছে তার অপেক্ষায়। তাকেই মারবে ছোবল। সে-ই সব চাইতে বড় অভাগা এ সংসারে।

সারাদিন সে অজানা আশঙ্কায় কাটায়। কারোর বাড়ি অঘটন শুনলে ভাবে, আসলে তাকে মারতেই এসেছিল, একটুর জন্য বেঁচে গেল যেন সে নিজে। রাতে ঘুম থেকে উঠে দেওয়াল, জানলা, দরজা, ছাদ পরীক্ষা করে দেখে, সেই আসল বড় দুঃখটা কোথায় ওত পেতে বসে তার অপেক্ষায়। সারাদিন তার সতর্ক নজর। প্রতিটা কলিংবেলের শব্দে, অচেনা পায়ের শব্দে বুক কেঁপে ওঠে। সেকি আসছে? এসে গেছে?

প্রতিটা ক্ষণ কাটে তার উদ্বেগে। অজানা উদ্বেগে। সব আঁকড়ে রাখে। যেন কোনোদিন কিছু হারায়নি সে জীবনে।