Skip to main content
bhul

যেই প্রশ্ন করল, অমনি সব ধাঁ।

      একটাও ভুত নেই! অথচ দোষের মধ্যে সে কি জিজ্ঞাসা করেছিল, হ্যাঁ গা, তোমাদের চোঁয়া ঢেকুর ওঠে?

      কি এমন প্রশ্ন! বাবা এদ্দিন তো মানুষই ছিলি, চর্ব্যচোষ্য গিলে গিলে ঢেকুর তুলেছিলি, সব ভুলে গেলি... ভুত হয়েছিস বলে এত....!!!

      হরিদাসীর মাথাটা গরম হয়ে গেল। আর ক'দিন যাক, ভুতটা হতে যা বাকি। এমন কিছু ভালো কাজ সারাজীবনে করিনি যে আমার ভুত হওয়া কেউ আটকাবে। কে স্বগ্গে গিয়ে ওই ধিঙ্গি মাগী ঊর্বশীগুলোর নাচ দেখে মরবে... তার চাইতে এর বাড়ি ওর বাড়ি ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে এটা সেটা খাব। ইদানীং যাই খাক না কেন চোঁয়া চোঁয়া ঢেকুর উঠছিল বলেই প্রশ্নটা করা। মানে ভুত হয়ে গেলেও কি একই ঝামেলা থাকবে?.... তা মিনসেগুলো সব পালালো....

      হরিদাসী বাসনগুলো মেজে বাড়িতে চলে এলো। ওই পুকুরপাড়েই যা ওদের সঙ্গে খানিক কথা হয়। ওদের মধ্যে তো সবাই এই গ্রামের, মানুষ থাকতেই সব চেনাশোনা। ক'টা গলায় দড়ি, ক'টা সাপে কাটা, একটা বিষ খাওয়া --- এই আর কি।

      বাড়ি এসে হরিদাসী লম্ফ জ্বালল। জপের মালাটা বার করে বসতে যাবে, হঠাৎ মনে হল ঘটিটা নড়ে উঠল। কেমন একটা সন্দেহ হল হরিদাসীর। উঠে গিয়ে ঘটিটা উপুড় করতেই... ছি ছি...! এ যে ভুলো....!!!

 

      তার তখন উঠতি বয়েস। মানে হরিদাসীর। তো পাশের গ্রামের মিনতির সঙ্গে সে সই পাতিয়েছিল। মিনতির বাড়ি সে যায় আজকে তো কাল মিনতি তার বাড়ি আসে। এমনই ভাব। সেই মিনতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এই ভুলোর। ছুতোরের কাজ করত। বিয়ে হবি তো হ তাদেরই গ্রামে। মিনতির সঙ্গে যতটা না ভালোবাসা বাড়ল অন্যদিকে হরিদাসীর সঙ্গে মাখামাখি হল বেশি। সে খবর রটতে কি আর দেরি হয়! তাড়াতাড়ি এক ছেলে খুঁজে সদরে বিয়ে দিয়ে দিল হরিদাসীর বাবা। সে মিনসে ছিল নাপিত। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মরল গাড়ি চাপা পড়ে। আবার সে বিধবা হয়ে এল নিজের গ্রামে। তবে বাঁচোয়া এই যে ফিরে এসে শুনল মিনতিরা বিহারে চলে গেছে। তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই। সেই ভুলো তার ঘটির মধ্যে.... তাই ওই মিনসে ভুতগুলো তাকে দেখেই অমন চম্পট দিল.....

      ভুলো বাইরে বেরিয়ে এসেই বলল, এই শোনো আমি ফরম এনেচি...। হরিদাসী বলল, কিসের ফরম...?

      আরে মরলে দেয় না?... পরের জন্মে কি হতে চাও... আর কোথায় জম্মাতে চাও... তিনটে খোপ আছে... আমি দিয়েছি শামুক, চিল আর কচ্ছপ... তুমিও তাই দাও না.... তোমার মরতে তো আর দেরি নেই...

      হরিদাসী একটু ভাবল। মানুষ হয়ে জন্মানো যে ফি বারেই হবে না সে জানত... মেলা পুণ্যি লাগে.. সে কোথায়? তা বলে চিল? শামুক? কচ্ছপ?

      হরিদাসী বলল, সাপ নয় কেন? বাঘ নয় কেন? বেজি নয় কেন?...

      ব্যস... সারারাত চলল তুমুল ঝামেলা। এদিকে ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ চলে আসছে। ভোরে রফা হল সাপ, কচ্ছপ আর টিকটিকিতে।

      ভুলো ফর্ম নিয়ে চলে গেল। কিন্তু এদিকে এক কাণ্ড হয়েছে, হরিদাসীর বাড়ির সামনের উঠানে যে এক ঘড়া সোনা পোঁতা আছে তা কে জানত! সে ঘড়া হঠাৎ করে পুঁইমাচা বাঁধবার বাঁশ পুঁততে গিয়ে ধরা পড়ল। আর হরিদাসীর কি মতি হল কে জানে, দিল সব টাকা এক হাস্পাতাল বানাতে সেই গ্রামে। ব্যস...! সব পাপ থেকে মুক্তি। ওদিকে ভুলো খালি তার ঘটি, গ্লাস এইসবের মধ্যে ঢুকে পড়ে আর বলে, একটা পাপ করো না গো... প্লিজ... একটা পাপ না করলেই যে নয়....

      আর যতই ভুলো এই সব বলে ততই তার পাপ যায় আরো বেড়ে... তা বাড়বে না? পাপের পথে নিয়ে যেতে চাইলে তো তাই হবে....! শেষে তার লাল পিঁপড়ে আর মশা হওয়া ছাড়া কোনো গতি রইল না। ওদিকে হরিদাসী স্বগ্গে গিয়েও পড়েছে আরেক জ্বালায়। সারাদিন ওই ঊর্বশীগুলোকে গালাগাল করে আর বসে বসে নাচ দেখে আর গান শোনে। কেউ সুখী হল না। না হরিদাসী, না ভুলো। তখন আর কি করা, দুজনেই 'দুয়ারে সরকারে' লাইন দিল। বলি ভুত হোক আর মানুষ, অসুখী হয়ে তো জীবন, থুড়ি, মরণ কাটানো যায় না!

 

      আমি কি করে এসব জানলাম? ওই যে ওরা ফর্ম নিয়ে আজ 'দুয়ারে সরকার'-এ এসেছিল না? তাই জানলাম।

[ছবিঃ Suman]