সৌরভ ভট্টাচার্য
21 August 2019
আমের আঁটিটা মাটিতে পোঁতার পর লোকটা মুদির দোকান থেকে একটা আমাজন জঙ্গলের ছবিওয়ালা মলাট সাদা খাতা কিনে এনেছিল। সেই সাদা পাতায় সে লিখেছিল,
"আমা কর্তৃক রোপিত আম্রবীজটি জাত বৃক্ষটির উচ্চতা হইবে ৪৫ ফুট, মূলের দৈর্ঘ্য হইবে ৮ ফুট, শাখা হইবে ৭টি, প্রশাখা হইব ৩৯টি, পাতা হইবে ১১৫৬টি, প্রতি বছর ফল ফলিবে ৫২৫টি।"
হল না। গাছটা হল ৩০ ফুট, মূল বলতে পারি না, শাখা হল চারটে, প্রশাখা হয়ত ১৮ টা, পাতা বলতে পারি না, আমের ফলনও কোনো বছর বেশি কোনো বছর কম।
লোকটা আমগাছটার নাম দিয়েছে বেইমান। ভাগ্যের নাম দিয়েছে বিমাতা। নিজেকে নাম দিয়েছে বিড়ম্বিত। আমগুলোর নাম দিয়েছে বেয়াদব কুলাঙ্গার।
ভীষণ অসুখী মানুষটা। প্রতিদিন তার মরে যেতে আর পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। আম গাছটার তলায় খাটিয়া পেতে ভাবে, হয় একদিন সে এই গাছটায় গলায় দড়ি দিয়ে মরবে, নয় পালিয়ে যাবে, গাছটা বিনা যত্নে ভুগতে ভুগতে নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে।
লোকটা মরে গেল। স্বাভাবিক মৃত্যুই হল। অসুখী হয়েই মারা গেল। গাছটা জানলই না মানুষটা তার জন্য অসুখী ছিল। সে সারাদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবত, আকাশটা ততটা নীল নয়, ততটা মেঘগর্ভী নয়, মাটি ততটা পুষ্ট নয়, জল ততটা মিষ্টি নয়, বাতাস ততটা শীতল নয়।
যদিও এই কথাগুলো আকাশ মাটি জল মেঘ বাতাস জানত না।