ঠাম্মি তোমার অন্ধকারে ভয় করে না?
অন্ধকারে ভয় করলে আমার চলবে দাদুভাই?
তুমি অবশ্য চোখেও দেখো না ভালো করে….
পাঁচ পেরোনো নাতি, পঁচাত্তর পেরোনো
ঠাম্মার লেপের তলায় গিয়ে ঢুকল। বৃষ্টি পড়লে, বাজ পড়লে ভয় পায় সে।
বাইরে দুটোই হচ্ছে।
নাতি বলল, বাবা মা এখন কি
করছে?
ঠাম্মা বলল, গল্প করছে মেঘের
উপর শুয়ে শুয়ে….
ওদের ভয় করছে না?
ওদেরও কি ভয় করলে চলে দাদুভাই? আসলে ভয় করলে কারোরই
চলে না। তোমার বাবা মা তোমায় এইটুকুন রেখে আমার কাছে মেঘের মধ্যে যখন চলে গেল, যে বুড়িটা নাকি
চোখে দেখে না, সোজা দাঁড়াতে পারে না….আমি কি ভয় পাইনি? কিন্তু ভয় পেলে
কি চলে দাদুভাই? আমি এই কথাটাই নিজেকে সব সময় বলতাম। আমার মা আমায় শিখিয়ে
গিয়েছিলেন কথাটা। আমার মা-ও রোজ সকালে দুধ দুইতেন, বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতেন।
আমার বাবা তো সেই কবেই মেঘে চলে গেছিল। আমার মনেই নেই মুখটা। আমার মা'ই একা একা সব দুধ
বিক্রির কাজটা দেখতেন।
নাতি ঠাম্মার গালে গাল
ঘষে বলল, যেমন আমাদের গরুর দুধ সোনাই কাকু দুয়ে দেয়? আচ্ছা সোনাই
কাকার একটা পা নেই…তাও কিভাবে রোজ আসে… ওভাবে সাইকেল
চালায় কি করে? লরি-বাসের ভয় করে না?...অবশ্য ওরও ভয় পেলে চলবে
কি করে, তাই না?
অনেক রাত হল। ঠাম্মা আর
নাতি ঘুমিয়ে পড়ল।
মাঝরাতে হিসু পেলো। খুব
জোর। ঠাম্মি নাকডেকে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু যেতে তো হবেই। ভয় করছে। ঠাম্মিকে ডাকবে? থাক। আজ ঠাম্মির
বিকেলে জ্বর এসেছিল। সেই থেকেই শুয়ে। ভয় করলে চলবে? নিজেকে বার কয়েক বলল, সে। বলতে বলতেই
মনের মধ্যে কেমন হ্যারিকেনের আলোর মত আলো জ্বলে উঠল।
ধীরে ধীরে টয়লেটের দরজাটা
খুলল। টিনের চালের উপর কি বৃষ্টি হচ্ছে রে বাবা! তারে গামছাটা মেলা আছে, যেন কেউ হাত বাড়িয়ে
ঝুলে আছে। চেয়ার দুটোতে যেন কেউ বসে আছে। কি ভয় করছে। কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু
ভয় করলে চলবে? আবার নিজেকে বলতে শুরু করল। এটাই মন্ত্র। ভয়টা পাচ্ছে, কিন্তু অতটা
হচ্ছে না কিছু।
টয়লেট করে বেরিয়ে এসেই
মনে হল, যাহ, জল দিলাম না তো! এদিকে
অনেকটা খাটের কাছে চলে এসেছে। কি করবে? আবার যাবে? এবার যেন দরজার
কাছেই কে উবু হয়ে বসে। ওটা ময়লা ফেলার জায়গাটা। তবু।
আবার ফিরল। জল দিল। এসে
শুলো। সকাল হল।
ঠাম্মি ডাকছে। ওঠ… চা খেয়ে নে… আয়, ওঠ।
চোখ মেলে তাকালো। আকাশ
পরিষ্কার। জানলা দিয়ে রোদ আসছে। মাথার কাছে সোনাইকাকা বসে চা খাচ্ছে। ঠাম্মি
সামনের চেয়ারে বসে। ঠাম্মি বলল, তুমি কাল একা একা টয়লেটে
গিয়েছিলে দাদুভাই?
সে লেপটা পায়ের কাছে ফেলে, বসে আড়মোড়া ভাঙতে
ভাঙতে বলল, ভয় পেলে কি চলবে ঠাম্মি… বিছানাতেই হয়ে যাবে… সেই তো আমাকেই
কাচতে হবে…
সব্বাই হো হো করে হেসে
উঠল।