Skip to main content

শুধুমাত্র নিজের জন্য যে ভাষার ব্যবহার করে, হয় সে পাগল, নইলে পরমহংস। পাগলের বাক্যের উদ্দেশ্য-বিধেয়, বক্তাশ্রোতা ভেদবুদ্ধি থাকে না, আর পরমহংস কথা বলেন অদৃশ্য, অশ্রুত, অস্পর্শিত, অঘ্রাণিত(?) অস্তিত্বের সাথে, মোটকথা আমাদের ধরাছোঁয়া তো দূরের কথা ভাবনাচিন্তারও বাইরে।
      বাকি মানুষ কথা বলে কেন? গর্ব করবে বলে? পরিচয় তৈরি করবে বলে? ধুর মশায়, এগুলো পরে এসেছে, গৌণ কথা। যেমন এককালে জামাকাপড় পরত লজ্জা নিবারণের জন্য, এখন স্টেটাস বড় কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাক, সে মেলা বড় আলোচনা। আমি হয়ত বিন্দুটা দাঁড় করিয়েছি... ঘাবড়ে গেলেন তো, মানে আরকি পয়েন্টটা রেজ করতে পেরেছি।
      তো ভাষা হল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যম। তার বাইরে সবই শৌখিন। যেমন আপনি যখন পেটব্যাথায় কাতর তখন আপনার সামনের চিকিৎসক যে ভাষা বোঝেন আপনাকে সেই ভাষাতেই কথা বলতে হবে। আপনি সাহিত্যচর্চায় না থাকলেও আপনার জীবনে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না, কিন্তু দিনযাপনের জন্য ভাষার ব্যবহারটিই আসল --- এইটে মনে রাখতে হবে। যে কারণে আমার তাবড় তাবড় ভাবনাবিদদের চাইতে এডওয়ার্ড জেনার যে টীকা আবিষ্কার করেছিল তাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়; জ্বরের ঘোরে সব বই ফেলে প্যারাসিটামল ৬৫০ সব চাইতে মূল্যবান আবিষ্কার বলে মনে হয়। তারপর যেই সুস্থ হই অমনি গৌণকে মূখ্য বলে চালিয়ে তর্কে নেমে পড়ি।
      মানুষ সেই ভাষাতেই কথা বলবে তার সামনের মানুষ যে ভাষাটা বোঝে, এবং সে নিজে বুঝিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। ভাষা কারোর কথায় বাড়ে কমে বাঁচে না। তবে তাবড় তাবড় বিখ্যাত হলিউড সিনেমা হিন্দিতে দেখতে বঙ্গসন্তানেরা ছুটত না, যদিও তামিলেও ডাব হয় সেটা আমরা বুঝি না। দেখতে ছোটে, কারণ বাংলায় হয় না। বাণিজ্যিক কারণে শুধু? মনে হয় না। এরকম আরো মেলা উদাহরণ আছে। সে নিয়ে ভারি করে লাভ নেই মাথা।
      মোদ্দা কথা যেটা বুঝি, যে ভাষা তাগিদে বেরোয় তাই ভাষা। আর যা সচেতন হয়ে আত্মপরিচয়ের ঝাণ্ডা তুলে ব্যবহার করতে হয় তা শখ। মুশকিল হল সংসারে শখের চাইতে দায়ের জোর বেশি। প্রত্যক্ষ উদাহরণের চাইতে আইডিয়া-কল্পনা-ইচ্ছা- বাসনার তেজ বেশিদিন টেকে না। গলা চড়ালেই যদি সত্য টাল খেত তবে তো হয়েই যেত।
      মানুষ যা বলে তাই ভাষা। যা ছাপে তাই না। তবে তো সংস্কৃত বইও লক্ষ লক্ষ ছাপা হচ্ছে। তো? ভাষা মুখে হাঁটে। সেই পরে ছাপায় আসে। তাই ইংরাজি হরফে সহজপাঠ ছাপা হচ্ছে। কারণ কথায় ওই ভাষা দুটো এগিয়ে যে। ভাষা বাঁচে শ্বাসে, ছাপাখানার কালিতে নয়। এটা বুঝলে দুটো লাভ। ভাষা নিয়ে কৌলিন্যবোধটা যাবে, আর এর-তার চোখ রাঙানিতে হাসি পাবে। "রইল বলে রাখলে কারে...."