Skip to main content


যেই না বলেছে, ওমিক্রন যদি হবে জ্বর নেই কেন?

অমনি পটলা খং খং, ঢং ঢং করে কেশে দেখিয়ে বলল, এমন কাশি বাপের জম্মে শুনিচিস? এ হল ওমিক্রণের কাশি।

অমনি বিরুদ্ধপক্ষ বলল, করোনা যদি হবে স্বাদগন্ধ যায় না কেন?

অমনি পটলা বলল, মুখ্যু কোথাকার, ওমিক্রণে ওসব হয় না রে। খবরের কাগজ পড়িস না বুঝি।

বিরোধীপক্ষ বলল বেশ, আনো কিট, করো পরীক্ষা।

কিট আনা হল। পটলা কাশতে কাশতে নাকে কাঠি দিল। তুলোয় লাগা বস্তু তরলে গুলে এক ড্রপ দিতে না দিতেই দুটো দাগ। মানে পজিটিভ। পটলা হুররে করে নেচে নিয়ে বলল, কিহে বলেছিলুম কিনা, এ হল সেই। সে এসেছে।

বিরোধীপক্ষ চুপ। সবাই ভাবছে এইবেলা কিট কিনে নিয়ে যাই বাড়ি। দেখি কদ্দূর গড়ালো নিজেদের মূর্খামি। হায় হায় রে।

পটলা ঘুমিয়ে। হঠাৎ গলা সুড়সুড়। পটলা উঠে বসল। কাশল। আবার শুতে যাবে, হঠাৎ কানের কাছে কে যেন বলল, একটু গপ্পো করবি?

পটলা ভালো করে তাকিয়ে দেখে, তার পাশে বসে ওমিক্রন। দেখেই চিনেছে। পটলা বলল, বলো।

ওমিক্রন বলল, আমাদের জন্য তোরা স্কুলে যাচ্ছিস না, না রে?

পটলা বলল, সে সত্যি। তবে তা ভালো না মন্দ জানি না। বন্ধুদের কথা ভাবলে মনে হয় বাজে হচ্ছে। কিন্তু স্যারেদের কথা মনে পড়লে মনে হয়, ভালোই হচ্ছে না খুলে।

ওমিক্রন বলল, তা শপিংমলগুলো খোলা তো। তোরা স্যারেদের বলে ওখানে গিয়ে পড়ছিস না কেন রে? কিম্বা গঙ্গাসাগরেও তো মেলা জায়গা। ওখানে যা। বেশ আউটিং হবে, আবার পড়াশোনাও হবে।

পটলা বলল, বাড়ি থেকে ছাড়বে?

ওমিক্রন বলল, আমাদের পূর্বপুরুষদেরকেও তো ছাড়ছিল না চীন থেকে। তারপর দেখ, কেমন দেশে দেশে নতুন রূপ ধরেছি আমরা। আমার জন্ম সাউথ আফ্রিকায়। জানিস তো?

পটলা বলল, আমার জিকে ভালো। জানি।

ওমিক্রন বলল, তবে আর দেরি কেন বাবা, তোদের স্যার ম্যাডামদের বল শপিংমলে কিম্বা গঙ্গাসাগরে গিয়ে ক্লাস নেবে। রবীন্দ্রনাথ কি খোলা মাঠে ক্লাস নেননি? কেন নিয়েছিলেন? কারণ উনি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা পুরুষ। উনি জানতেন একদিন ভেন্টিলেশান একটা বড় ইস্যু হবে। তাই উনি মাঠে ক্লাস নিয়ে রাস্তা দেখিয়ে গেলেন।

পটলা দেওয়ালে ঝোলানো রবীন্দ্রনাথের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, ইস, আগে ভাবিনি তো। তবে তো রচনায় এই পয়েন্টটা লিখলে গাবলুটা তার থেকে কম পেত।

ওমিক্রন বলল, আরো দেখ, গান্ধীজীও তো কত বারণ অমান্য করলেন। নুন বানাতেই কত কিলোমিটার হেঁটে গেলেন। তো? তোরা কি কিচ্ছুটি শিখবি না? খালি একে ওকে দায়ী করলে কি হয় রে? উঠে দাঁড়া। সব শপিংমলগুলো ব্লক করে দে বইখাতা, ব্ল্যাকবোর্ড, মাস্টার, দিদিমণি সবাইকে নিয়ে গিয়ে। লাগা পড়াশোনা। ট্রেন ভরে ভরে যা দিকিনি গঙ্গাসাগর, লাগা পড়াশোনা। ওরে রাস্তায় নামার তাগিদ না জন্মালে কি আর রাস্তা বাড়ির দরজায় এসে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাবে?

পটলার কথাটা বেশ লাগল। নিজেকে কেমন গান্ধীজী লাগল। তাই তো, আইন অমান্য করে স্কুলের চৌহদ্দিতে না হোক, ওত বড় বড় শপিংমলগুলোতে তো যাওয়াই যায়, নইলে গঙ্গাসাগরে।

ভোর হল। পটলার কাশিটা একটু কম। ফোনটা নিয়ে ভাবছে কাকে প্রথম ফোনটা করবে, অমনি খুসখুসে গলায় ওমিক্রণ ভোকালকর্ডে দুটো আঁচড় কেটে গেয়ে উঠল, ওরে নূতন যুগের ভোরে দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে…..