Skip to main content

যে মানুষটা রাত করে বাড়ি ফিরলে চিন্তা করত, ভীষণ বকাবকি করত, সে জানেই না সে শুয়ে আছে বিছানায় বছর দেড় হল। জেগে আছে কিন্তু জ্ঞান নেই। তার দুশ্চিন্তার কারণ যে মানুষটা সে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে আসে। গল্প করে। খাইয়ে দেয়। টয়লেট করিয়ে দেয় নিজেই, কারণ দিনের আয়া আটটায় চলে যায়। গা হাত মুছিয়ে কাচা একটা নাইটি পরিয়ে দেয়। যেমন সে আগে নিজে পরতে পারত।
      লোকটা একা একা ভাত বেড়ে খেয়ে যখন শুতে আসে, তখন খবরের কাগজটা নিয়ে পাশে একটা চেয়ারে বসে, কপালে হাত দিয়ে তার সংসারে একমাত্র পরিচিত মানুষটার তার দিকে অপরিচিতের মত তাকিয়ে থাকা দেখতে দেখতে গায়ের তাপমাত্রা মাপে, পাখার স্পিড ঠিক করে। তারপর বিছানায় শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আকাশের তারারা জানলার সামনে ভিড় করে আসে। তারাগুলো চেনা হয়ে গেছে অনেক। যেন একটা তারা কম পড়লেও বুঝতে পারবে।
      কিন্তু যেদিন বৃষ্টি হয়, জানলা বন্ধ করে দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে তার দমবন্ধ লাগে। গান গায় গলা ছেড়ে। কেউ তাল দেয় না, কেউ বাহ্ বলে না। কেউ বলে না, এই লাইনটা আবার গাও...
      আত্মীয়স্বজনে বলে সে যেন সাবিত্রীর পুরুষ সত্তা। মানুষটা মৃদু হাসে। সাবিত্রী একটা বিশ্বাস। সে সাবিত্রী নয়, সে প্রায়শ্চিত্তকারীও নয়, কেউ কেউ যেমন ভাবে। সে শুধু জানে সে এর বাইরে কিছু করতে জানে না। যে মানুষটা বিছানায়, সে অসহায় নয়, সে অসুস্থ। মারাও যাবে এইভাবেই, ডাক্তার বলেছে। অসহায় সে নিজে। যদি এতগুলো বছর একসাথে কাটিয়েও সে কপালের তাপমাত্রা বুঝে পাখার স্পিড ঠিক কর‍তে না পারে, তবে ও শীতে কুঁকড়াতে চাইবে, কিন্তু চাইলেও তো পারবে না। যেমন গরম লাগলেও সে বগলের গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছতে পারবে না।
      তাই ঘাম আর কাঁপুনির মধ্যে একটা দাঁড়াবার জায়গা খুঁজছে মানুষটা, যাকে বাইরের লোকে বলে ভালোবাসা। সে বোঝে না, সে বোঝে শুধু বুঝতে চেষ্টা করার উৎকণ্ঠা, শান্ত কান্না নিয়ে।