Skip to main content
 
 
 
ভালোবাসা আর ভালোবাসার পাত্রটি কি এক বস্তু? তা তো নয়। আলোতে যাকে দেখি, তাকে আলো বলে ভুল করি না, কিন্তু যাকে ভালোবাসি তাকেই ভালোবাসা বলে কতবার ভুল করে বসি। তারপর তার থেকে যখন আঘাত আসে, তখন ভাবি ভালোবাসা বলে সংসারে যা আছে তা বুঝি কেবলই ফাঁকি, মিথ্যা। এতে শুধু যে গাছটা শিকড় উপড়িয়ে মাটিতে পড়ে তাই না, মাটিটাকেও বলে, 'তুমি - মিথ্যা, মায়া, কুহক।'
        আমার আত্মীয়ের এক শিশু টিভিতে কার্টুন শেষ হয়ে গেলেই চিৎকার করে কান্না জুড়ত। বলত, "টিভিটাকে খুলে আমায় ওদের বার করে কাছে দে রে, খেলি।" তাকে তখন অন্য খেলনা দিয়ে ভোলানো হত। আমাদেরও তেমনি, ভালোবাসার পাত্রটা হারালো তো কান্নার পর্ব শুরু হল। তারপর আবার নতুন খেলনা খোঁজার খেলা। সেই শিশুর কাছে যেমন টিভি মানেই কার্টুন, আমার কাছে তেমন ভালোবাসা মানেই ভালোবাসার পাত্র।
        অনেক আঘাতে পোক্ত হতে হতে ক্রমে এ বোধ জন্মায় - ভালোবাসার পাত্রের সীমা আছে, ভালোবাসার নেই। মন নিজেকে চিনতে শেখে। বোঝে যে কস্তুরীটি কোথায়, বাইরে না ভিতরে? এই নিজেকে চিনবার প্রথম ধাপ। নিজের অন্দরমহলে ঢোকার প্রথম পদক্ষেপ। ভালোবাসা ক্রমে সাবালক হয়। ভিক্ষার ঝুলি হাতে এর দরজায়, তার দরজায় ঘোরা বন্ধ হয়। সে ভালোবাসায় ডাক দেয় , ভালোবাসায় সাড়াও দেয়। কিন্তু তার ডাকে কেউ সাড়া না দিলে নিজেকে দীন, নিঃস্ব অনুভব করে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বসে থাকে না, অভিমান করে। অন্যদিকে সে যখন নিজে সাড়া দিয়ে অভিসারে পৌঁছায়, আর পৌঁছিয়ে দেখে এ তো কুঞ্জবন নয়, এ যে মরুভুমি! তখন সে মিথ্যা মরীচিকার আশ্বাসে নিজেকে ঠকায় না। সে যে এসেছিল সে চিহ্নটা রেখে আসে কিন্তু অভিযোগের কাঁটাগাছ বপন করে আসে না।
        তুমি বলবে, এ তো সন্ন্যাসীর ভালোবাসা, এ তো করুণা। এ প্রেম না তো? এতে কি বিরহ নেই, যন্ত্রনা নেই? সে উত্তেজনা কই? এ তো নিস্তরঙ্গ দীঘি! 
        আমি বলব, তা নয় বন্ধু, নোঙর তুলেই দেখো, পাড়ে না ঠেকলেও, ঝড়ঝাপটায় তুমি পাকা মাঝি হয়ে উঠবে দিনে দিনে। ভাগ্য বলে তেমন কাউকে পেলে যদি, তো নিলে নৌকায়, আর না পেলে যদি, সামনে অন্তত সাগর তো রইলই। নৌকা শূন্য বলে কেঁদে জীবন কাটানোর চাইতে ঢের ভালো হাল শক্ত করে ধরার অভ্যাস করা, নয় কি?