দীঘির জলে ফুলটার প্রতিবিম্ব। ফুলগাছটা একদম দীঘির পাড় ঘেঁষে।
দীঘির কালো জল, প্রতিদিন তার নিজের বুকে ফুলটার প্রতিবিম্ব দেখে। আর মুখ তুলে ফুলটার দিকে তাকায়।
কখনও কখনও হাওয়া এসে দুষ্টুমি করে জলের উপর ঢেউ তুলে যায়। প্রতিবিম্বটা ঢেউয়ে ঢেউয়ে যায় ভেঙে।
কখনও সেই দুষ্টু বাতাস ফুলগাছটার ডাল ধরে এমন ঝাঁকুনি দেয়, জলের বুকের ফুলটাও ওঠে কেঁপে।
জল, ফুল, বাতাস একসাথে ওঠে হেসে।
আবার সব স্থির হয়। ফুল স্থির চেয়ে থাকে জলের দিকে। বুকে আঁকা প্রতিবিম্বকে আদরে আলিঙ্গন করে জল চেয়ে থাকে ফুলের দিকে।
সন্ধ্যে হয়। যখন কৃষ্ণপক্ষ, তখন কেউ কাউকে পায় না দেখতে। জল হাওয়াকে বলে, মৃদু আন্দোলন তোলো না ভাই, ও বুঝুক আমি আছি জেগে।
বাতাস মৃদু ঢেউ তোলে। পাড়ে এসে ঢেউ আওয়াজ তোলে - ছলাৎ..ছলাৎ....
ফুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকায়। তারা ভরা আকাশের ছায়া জলের বুকে। জল ছোঁয় না। ফুল জানে। সে মাঝে মাঝে জোনাকিকে বলে, আমার পাপড়িতে একটু বোস না ভাই, ও দেখুক, জানুক আমি আছি চেয়ে!
জোনাকি এসে পাপড়িতে বসে। জলের মধ্যে রঙীন আলোর স্পন্দন। ফুলের রঙে রাঙা। জলের সাথে তারারাও দেখে। হয় আমোদিত।
ফুল নিঃশঙ্ক, নির্ভয়। সে জানে শেষবেলায় পড়বে জলেরই বুকে। তার পরম পরিণতি। চির কাঙ্ক্ষিত অন্তিম বাসর।
জল শান্ত, আত্মস্থ। জানে সেদিনের অনন্ত বিরহের পেয়ালা ভরবে নীলাকাশ।
এইটুকুই তো জীবন। এমনই তো ভালোবাসা। অসীম তার রেশ। সেই সুরেই এই চিরকালীন যাওয়া আসা।