ভালো দু’প্রকার।
এক, সোজা ভালো। যেমন ফুল, সুস্বাদু খাবার, মিষ্টি কথা, সুগন্ধ, শ্রুতিমধুর সঙ্গীত ইত্যাদি।
দুই, লব্ধ ভালো। খুব কঠিন এটা। এটা মানে যেমন ধরুন আকরিক থেকে ধাতু বার করা। জমি চাষ করে, রীতিমতো জমির সঙ্গে, খরার সঙ্গে লড়াই করে ফসল আনা। এই ভালো সব সময় মন্দের সঙ্গে মিশেই থাকে। আলাদা করা খুব কঠিন কাজ। শ্রমসাধ্য কাজ। ধৈর্য ও সংযমের কাজ।
খারাপ, দুই প্রকার।
এক, সোজা খারাপ। যেমন দুর্গন্ধ, বাজে কথা, পচা খাবার ইত্যাদি ইত্যাদি।
দুই, অচর্চিত খারাপ। যেমন মানুষের ভাষা, রুচি, অভ্যাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা ডিফল্ট মোডে খারাপই থাকে। অসংস্কৃত, অমার্জিত, অসভ্যই থাকে। এদের চর্চা করলে ভালো হয়। সেই যে গো, "এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা".... এই আবাদ না করে রেখে সেই অমার্জিত, অসংস্কৃত, অসভ্য অবস্থাকেই অনেকে বলে আসল অবস্থা। সে বিশ্বাসই করে না ওগুলো আসল অবস্থা না, ওগুলো অচর্চিত অবস্থা। কেউ কেউ গানের গলা নিয়ে জন্মালে মোটামুটি সবাইকেই চর্চা করেই গানের গলা তৈরি করতে হয়। " ওই অ-রেওয়াজি গলাই আমার আসল অবস্থা" বললে কথাটা অসম্পূর্ণ সত্য বলা হয়।
এতো কথা কেন বলছি? আসলে হয়েছে কি, আমাদের মাটিতে দীর্ঘদিন খাঁটি চর্চার জায়গায় ভণ্ডামি বা অলীক আত্মতৃপ্তিতে পেয়ে বসেছিল। ফলে এদিকে অমার্জিত, অসংস্কৃত মাটি, কিন্তু তার উপরেই কৃত্রিম কালচারের চাদর ঢেকে বেশ চলে আসছিলাম। ভাবছিলাম সবাই যখন এতেই মজেই আছে এইভাবেই চলে যাবে।
কিন্তু তা হল না। হুস করে চাদর গেল উড়ে। আমরা সবাই টের পেলাম আমরা আসল অমার্জিত মাটির উপর নকলের চাদর বিছিয়ে এতদিন গর্ব করে আসছিলাম। একজন বিজ্ঞজন বলছেন শুনলাম, আমি তো ভাবতেই পারি না যে অমন অশালীন কথা শুনে জনতার মধ্যে এত হর্ষধ্বনি ওঠে কি করে?
আমার কথাটা শুনে হাসি পেল। এ যেন সেই ঠাকুরের গল্পের মত। একজন যাত্রা শুনবে বলে সবার আগে এসেছিল। সামনে জায়গা নিয়ে মাদুর পেতে শুলো। ভাবল দেরি আছে যখন ঘুমিয়ে নিই। ওমা! সে ঘুম ভাঙল যখন যাত্রা শেষ হয়ে গেছে তখন।
আমার মনে হল তাকে জিজ্ঞাসা করি, ওহে বুদ্ধিজীবী, আপনি কি ঘোর নিদ্রায় ছিলেন? গঙ্গা দিয়ে কত জল যে বয়ে গেল!
আজ আমাদের প্রতিপদে লজ্জা। ওদের মুখোমুখি হই সে সত্যের জোর নেই। কারণ আমাদের বুলি ছাড়া আর সম্বল কিছু নেই। সত্যকারের কাজ আমরা করিনি। গর্ব করেছি কষে আর অন্যদের হেয় করেছি পরম ঔদ্ধত্য নিয়ে।
আজ যখন দেখছি নিজেকেই চিনি না, ওরা বাইরে থেকে এসে আমাদের চিনে নিয়ে আমাদেরই উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তখন আমাদের আসলেই আর লজ্জা রাখার জায়গা নেই। নিজের দুর্বলতা বুলি আর বক্তৃতা দিয়ে মেটানো যায় না। কাজ কই? মানুষকে চেনা কই? কিস্যু হয়নি। মূর্খের স্বর্গে বাস করে ভেবেছি সারা বাংলা রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিতে একেবারে হেউঢেউ হয়ে আছে। আদতে কিস্যু হয়নি। নিজেকেই নিজে চিনিনি। মুখটাকে সুসজ্জিত করতে গিয়ে সারা গায়ে ছ্যাদলা পড়ে গেছে। এখন নিজের গা কে অস্বীকার করে শুধু মুখটুকু নিয়ে কি বাঁচা যায়? তাই ওরা আজ যখন গা ধরে টানছে, আমরা তখন ওদের নানা রকম বিদেশি ফ্যাসিস্ট ট্যাসিস্ট শক্ত গালাগাল দিয়ে ভাবছি বেজায় একটা কাজ করছি! এও নিজেকে ঠকাচ্ছি। আর হাস্যকর করছি। আসলে আচমকা ঘুম ভাঙা তো, তাই সামলাতে পারছি না আর কি।