Skip to main content

লোকটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ক্ষমা কোরো। আমি শুধু ভুলের পর ভুলই করে গেলাম জীবনে।

আয়নার ভিতর থেকে সে বলল, জানি তো। কিন্তু এখন এ সব বলে কি লাভ?

লোকটা জানলার দিকে তাকালো। সত্যিই অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। এত ভুল, এত ভুল। সে আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু কেন করলাম? কেন এরকম ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম? আমার হাত পা কামড়াতে ইচ্ছা করছে। যদিও জানি নিজেকে গোটা খেয়ে ফেললেও কিছু পাল্টাবে না। কিন্তু কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলাম বলো তো?

অমনি ঘরের আলোটা জ্বলে গেল। বাইরেটা ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেল। চারদিকে কুয়াশা আর কুয়াশা। লোকটা নিজের হাত পা-ও দেখতে পাচ্ছে না। সামনের দিকে তাকিয়ে তাজ্জব হয়ে গেল। আয়নার ভিতর আয়না, তার ভিতর আয়না, তার ভিতর আয়না। যেন আয়নার সুড়ঙ্গ। সে দেখল একই প্রশ্ন সে বারবার করে যাচ্ছে। এক ঘটনার হাত ধরে আয়না পার হচ্ছে আরেক ঘটনা। যেন রিলে রেস। একটা অনন্ত শৃঙ্খলা।

লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বুঝেছি।

আবার সব আগের মত হল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে। আয়নার ভিতরে দাঁড়িয়ে সে। সে হতাশ হল। আয়নার সেও হতাশ হয়ে চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে থাকল। তার কান্না পেল। আয়নার তার চোখের কোল ভরে এলো। সে হাসার চেষ্টা করল। আয়নার তারও দাঁতটা বার করল। অবশেষে সে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকল। কি আশ্চর্য, সে যতক্ষণ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকল আয়নার ভিতর সেও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকল। সে আয়নাকে বলল, কি হবে কেঁদে? কি হবে অভিযোগ করে? কি হবে ক্ষোভ রেখে?

আয়নাও একই কথা বলল।

লোকটা জানলার পাশে এসে বসল। রাস্তা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে লরি গেল একটা। ধুলো উড়ে চোখেমুখে ঢেকে গেল রাস্তায় শোয়া একটা কুকুরের। সে উঠে গা ঝেড়ে চলে গেল। লোকটা বলল, বেশ। সামনের ভাঙা সাইকেলটার গায়ে জমেছে ঝুল। সেখানে আটকে পোকা। মাকড়সা খাচ্ছে। পোকাটা মরে গেছে এতক্ষণে। লোকটা বলল, বেশ। হঠাৎ হাওয়া দিল। পাশের বাড়ির আমের বোলের গন্ধ এলো। লোকটা বলল, বেশ।

জানলার রড তাকে বলল, তুমি কি অদৃষ্টবাদী হলে শেষে?

সে বলল, তুমি কি আমাকে প্রশ্ন করছ, না দোষারোপ করছ?

রড বলল, দোষারোপ।

সে বলল, বেশ।

রড বলল, উত্তর দেবে না?

সে বলল, না।

রড বলল, তুমি কাপুরুষ অদৃষ্টবাদী তবে।

সে বলল, তুমি আমার নিন্দা করছ না স্বগতোক্তি করছ?

রড বলল, নিন্দা করছি।

লোকটা বলল, বেশ।

 

দিন যায়। একদিন আমহারা আমের গাছ তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি সুখী?

সে বলল, জানি না।

গাছ বলল, দুঃখী তো নও।

সে বলল, তাও জানি না।

আমগাছ বলল, তবে? কিচ্ছু ভাবো না আর?

সে বলল, যেখান থেকে আসত ভাবনারা, সে ভাবনার কারবার ছেড়ে রঙের ব্যবসা খুলেছে। সে রঙ দেয়, আমি রঙ মাখি।

গাছ বলল, কি রঙ প্রিয় তোমার?

সে বলল, নীল।

গাছ বলল, সে দেয়?

লোকটা বলল, মাঝে মাঝে। তোমার বোলের মত, নির্দিষ্ট কালে।

তবে তুমি অধীন হলে তার? আমি যেমন সময়ের? গাছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

সে বলল, তার অধীন হয়েছি বলেই নিজের কাছে নিজে পেয়েছি ছুটি। নইলে দেখেছি নিজের মনের ভার বিশ্বের ভারের থেকেও বেশি।

গাছ বলল, তাই হবে। কিন্তু আমি এখন কি করব বলো তো? অপেক্ষা? আবার কবে আসবে বোলের কাল?

সে বলল, অপেক্ষা কেন করবে? তুমি হাওয়াকে বলো, এসো। মাটিকে বলো, এসো। মধুকরকে বলো, এসো। বৃষ্টির জলকে বলো, এসো। যে ছাওয়ার নীচে বসবে, বোলো, বোসো। যে গাছ কাটবে, বোলো নাও।

গাছ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে বলল, লাগবে যে!

লোকটা বলল, সে লাগার সীমা আছে, কিন্তু অবশ্যম্ভাবীকে আটকাতে যাওয়ার যন্ত্রণার কোনো শেষ নেই ভাই অকারণে লড়ে কেন মরবে?...

আমগাছ বলল, বেশ।