Skip to main content
 
 
ছোটো স্টেশান। একটা বেঞ্চ দেখেছিলাম। কাঠের। পরিত্যক্ত। লতানে গাছ উঠে গেছে বেঞ্চের পায়া জড়িয়ে হাতল ছুঁয়ে পিঠ ঠেকানোর জায়গা অবধি। কত রকম ফুল ফুটেছে সে লতানো গাছগুলোতে। বসার জায়গাটায় ফাটা কাঠ কয়েকটা। ধুলো জমে আছে বিস্তর। পাখির মলের পুরোনো নতুন দাগ।
 
       ট্রেন আসছে যাচ্ছে। লোকে উঠছে নামছে। কেউ বেঞ্চটাকে খেয়াল করছে না। এমনকি পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও বসছে না। একজন বয়স্ক কুলিকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা সারানো হয় না? 
কুলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, এমন অদ্ভুত কৌতুহলের কারণ খুঁজতে খুঁজতে বলল, সো রহি হ্যায়... শান্তি সে... সোনে দো...
       শান্তিতে ঘুমাচ্ছে? তাই? শান্তি এমন কদর্য? এমন অবহেলার?
       আমার মনে পডল তোমার কথা। মনে পড়ার মত করেই মনে পড়ল, বহুদিন পর। তোমার শান্তির কথা ভেবে আমি তোমার কাছে কোনো প্রত্যাশা রাখি না বহুদিন। আমার কান্না-সুখ-সংশয়-অতৃপ্তি-তৃপ্তি সব অজানা তোমার কাছে। তুমি আমায় দেখেও দেখতে পাও না। আমার অভিনয়, তোমার শান্তির জন্য শেখা অভিনয়, এতটাই সত্য হয়ে উঠেছে আজকে। আমার দুঃসময়ে, কিম্বা হঠাৎ ভালো লাগায় তোমায় মনে পড়ে না আর। বাগানে নতুন কেনা গাছে কুঁড়ি ধরলে, নতুন কিছু পড়লে, কোনো ভালো সিনেমা দেখলে, কিছু উপলব্ধি করলে - তোমায় বলতে ইচ্ছা করে না আর। মনেও পড়ে না। অথচ কাজের কথা বলা হয়ে যায় অনায়াসেই।
       আমার স্মৃতিতে তুমি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছ দিন দিন। তোমায় সত্যিই তবে শান্তি দিতে পেরেছি বলো?
       আমাদের সম্পর্কটা এই বেঞ্চটার মত। শান্তির আবর্জনায়, অবহেলায় ঘুমিয়ে। ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়। ভেঙে গেলে আমরা দুজনের কেউ কি টের পাব? মনে পড়বে একদিন আমাদের একটা যৌথ আশ্রয় ছিল - আমাদের সম্পর্ক? আমাদের যৌথ সম্পদ!