Skip to main content
 
 
      ছোটো ছোটো ঘর অনেকগুলো। টিনের দেওয়াল। ছাদ টালির, কি টিনের। বেশিরভাগই দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। কেউ চাষ করেন, কেউ জন খাটেন, কেউ বিড়ি বাঁধেন, ছোটোখাটো ইলেকট্রিকের কাজ করেন। 
      যাদের কথা বললাম, সবাই পুরুষ। বেশিরভাগ মহিলারাই লোকের বাড়ি কাজ করতে যান। আমাদের বাড়িতেও আসেন।
 
 
      সকালবেলা ঝাঁট দিতে দিতে বললেন, "কাল রাতে আমাদের বাড়ি কারেন্ট ছিল না দাদা। আমার ছেলে বলল, ফুজ (ফিউজ) উড়ে গেছে হয়তো। খুলে দেখল, বলল, যাইনি মা। তা হলে পোল থেকে কিছু লুজ হয়েছে। ইলেকট্রিক অফিসে ফোন করতে হবে। তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। আমি ভাবছি যা গরম, কখন কারেন্ট আসবে, শুতে যাব, আবার তো ভোর পাঁচটায় উঠতে হবে বলো? দাদা মাঠে যাবে, আমি কাজে বেরোবো ওদের টিফিনটা করে দিয়ে।"
      আমি বললাম, "শুধু তোমাদের বাড়িতেই গিয়েছিল?"
      বলল, "হ্যাঁ দাদা। কিন্তু তোমার দাদা ফোন করতে দিল না। বলল, থাক, তার চাইতে এসো বাইরেটায় হাঁটি, হাওয়া দিচ্ছে।"
      "গেলে?"
      "যাব না? কি গরম ঘরে! খাওয়া হয়ে গেছে, বসে কি করব? তা বাইরে হাঁটতে হাঁটতে তোমার দাদা বলল, দেখো, ওরাও তো আমাদের মত সারাদিন খেটে রাতে একটু জিরোয়। এ পাড়াতে তো শুধু আমাদের বাড়িটাতেই নেই, থাক না, আমরা একটা রাত একটু কষ্ট করেই কাটিয়ে দিই। সকালে না হয় ওদের ফোন করলে হবে। একটা বাড়ির জন্য আর কষ্ট দিয়ে কি হবে?"
      আমার চোখ খবরের কাগজের পাতা ছেড়ে সারারাত না ঘুমানো ক্লান্ত চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে। ক্লান্তি আছে, অভিযোগের অসন্তোষ নেই। আমার কথা সরছে না। সে আমার অবস্থাটা বুঝে বলল, "তুমি তো জানো তোমার দাদার স্বভাবটাই ওরকম।"
      "ওরা সকালে এলো?"
      "এলো। লাইনটা ঠিক করে দিয়ে দাদাকে বকল। বলল, ওরকম কেউ করে? যখনই অসুবিধা হবে ডাকবেন। এটাই তো আমাদের কাজ!"
      "উনি কি বললেন?"
      "বললেন, ওদের জন্য একটু চা বসাতে পারবা?"
 
 
      খবরের কাগজে পড়ার মত কিছু নেই আপাতত। তিনি বেরিয়ে গেলেন। আরো অনেকগুলো বাড়ি যাবেন। এতক্ষণে ওনার স্বামীর নিশ্চয় চাষের কাজও এগিয়েছে অনেকটা। ছেলেটাও কাজে গেছে। দুই পুরুষ স্কুলের গণ্ডী পেরোননি। মহিলা সেই গণ্ডীতেই ঢোকেননি।
      ব্যতিক্রমী মানুষের গল্প লিখলে আত্মশুদ্ধি হয়। তাই লেখা।