ফকির পলাশ ফুল কুড়িয়ে নিয়ে বলল, যা পাগল, কোঁচড়ে ভরে নিয়ে যা। গিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দে।
যে ফকির। সে-ই পাগল। নিজেকে নিজে বকে। নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দেয়। নিজেকে নিয়ে বেড়াতে বেরোয়। আবার নিজেকে নিয়ে ঘুমায়।
ফকির দেখল, পাগল সব পলাশগুলো জলে ভাসালো। ফকিরের মনে ব্যথা জন্মাল। তবে কী ভুল নির্দেশ দিলাম? থাকতই না হয় মাটিতে পড়ে।
পাগল বলল, জলে নামবে? পলাশগুলো ফিরিয়ে আনবে?
ফকির বলল, থাক।
দুজনে এসে গাছতলায় বসল। ফকির তাকালো গাছের নীচে। কত পলাশ পড়ে। পাগল তাকালো গাছের দিকে। কত পলাশের কুঁড়ি।
রাত হল। পাগল ঘুমালো। ফকির স্বপ্নের তুলি নিয়ে একের পর এক পলাশ এঁকে চলল সারাটা মন জুড়ে। তার চোখে ঘুম নেই। কোনোদিনই ঘুম নেই। কী একটা ব্যথা, তাকে কখনও গভীর সুখে, কখনও গভীর আনন্দে জাগিয়ে রাখে।
পাগল সকালে উঠে দেখে সারাটা মন পলাশের রঙে রাঙিয়ে। একি! একি!
পাগল উঠল নেচে। গাছের রঙ, আকাশের রঙ, মাটির রঙ, সব সব রঙ রাঙিয়ে আছে পলাশে!
ফকির কিন্তু উদাস। পাগল বলল, আজ চলো গান গাই। আজ চলো নাচি। আজ চলো সারাটা দিন হৈ-হুল্লোড় করে কাটাই।
পাগল গেয়ে-নেচে ধুলোয় মাখামাখি হয়ে সে যে কী একটা কাণ্ড ঘটালো। দেখতে দেখতে সূর্য গেল অস্তে। পাগল পড়ল ঘুমিয়ে গাছের তলায়। পলাশ গাছের তলায়।
সারারাত জুড়ে পলাশ পড়ল টুপ টুপ করে শিশিরে ভিজে পাগলের গায়ে।
ফকির চাঁদের দিকে তাকিয়ে জেগে। তার যেন সব হারিয়েছে। আবার যেন সে সবই পেয়েছে। কি পেয়েছে, সে পাগল জানে। আর কি হারিয়েছে? তার খোঁজ কে জানে?