Skip to main content
 
 
অনেকদিন মৃত্যুর সাথে লড়াইটা ব্যক্তিগত ছিল। আজ নেই। আজ গোটা বিশ্ববাসী বনাম মৃত্যু। মিলিত লড়াই। জোট বাঁধা লড়াই। সবাই সবাইকে নতুন করে চিনছি। পুলিশ থেকে শুরু করে যে মানুষটা খবরের কাগজটা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সবাইকে ভীষণ কাছের লাগছে। আসলে সবাইকেই ভীষণ কাছের লাগছে। কেউ যেন পর নয়। সবাই একই সূত্রে, একই অনুভবে। এমনটা হয়নি। আমরা সবাই যেন হঠাৎ করে সেলিব্রিটি। আসলে জীবন নিজেই সেলিব্রিটি এখন। আমরা ভয়ংকরভাবে জীবনের সাথে থাকতে চাইছি। প্রাণপণে জীবনের সাথে থাকতে চাইছি। সবাইকে নিয়ে থাকতে চাইছি।
 
 
"না চাহিতে মোরে যা করেছ দান
আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ,
দিনে দিনে তুমি নিতেছ আমায়
সে মহাদানেরই যোগ্য করে
অতি-ইচ্ছার সঙ্কট হতে
বাঁচায়ে মোরে।"
 
       এ কথাগুলো এত গভীরভাবে আগে উচ্চারণ করা হয়নি তো। আজ হচ্ছে। আজ সবাই ভীষণ কাছাকাছি। প্রতিদিন দেখা হওয়াতে, প্রতিদিন কথা হওয়াতে, নিত্য নানা অনুষ্ঠানে, কাজের জগতে আমরা যত না কাছাকাছি আসতে পেরেছি বা চেয়েছি, আজ বাড়িতে আটকে রেখে নিজেকে তার থেকে অনেক বেশী কাছাকাছি আসতে পেরেছি, চাইছি। দূরত্ব বেড়ে যেতে বুঝলাম দূরত্বটা কমিয়ে বাঁচা, বেঁচে থাকার জন্য কতটা আবশ্যক। যারা অনেক দূরে আছে আজ মনে হচ্ছে সবাইকে যেন অবশেষে দেখতে পাই। এই আকুতিটা এমনভাবে ছিল জানতাম কই? আজ জানছি। ভীষণভাবে জানছি।
       আমাদের চিকিৎসক আর বিজ্ঞানীরা ভীষণভাবে লড়ছেন। আমাদের সবার হয়ে, সবার জন্যে ভীষণ ভীষণভাবে লড়ছেন। আমাদের ঘরে থাকতে হবে। থাকতেই হবে। এই কথাটা আমরা বেশিরভাগ মানুষই বুঝে গেছি। অন্তত আমাদের চিকিৎসক আর বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে আমরা যে প্রতিটা ক্ষণকে বাজি রেখে অপেক্ষায় আছি সে তো আর মিথ্যা হতে পারে না।
       আমার মনে হয় আমাদের একটা কথাও পাশাপাশি ভাবতে হবে। আদর্শগতভাবে শুধু না দেখলেও বাস্তবের দিকে তাকিয়েও একটা কথা বুঝতে হবে। শুধু নিজেকেই ঘরে সুরক্ষিত রাখলে হবে না, অন্য মানুষটাও যাতে ঘরে সুরক্ষিত থাকতে পারে সে দিকটাও ভাবার আছে। আমি খাবারের কথা বলছি, ওষুধপত্রের কথা বলছি। সরকার নিশ্চয় ভাববে। সরকারের তরফ থেকে কোনো খামতি থাকলে সে নিয়ে পরে সুক্ষ্ম বা স্থূল আলোচনাও করা যাবে। কিন্তু ততদিন যে মানুষগুলোর ঘরে থাকতে পারাটা একটা জীবন-মরণ সংকটে এসে দাঁড়াতে চলেছে তাদের জন্য কয়েক পা এগোতে হবে।
অনেকে অল্প অল্প দিলেই সেটা অনেক হয়। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতেই পারি। অন্তত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের দিকে তাকিয়েও যেন করতে পারি। আমরা তো জঙ্গলে নেই, একটা সভ্যতায় আছি। সভ্য হতে গেলে কিছু শর্ত তো এসেই যায় না? তাই শুধু stay home, stay safe না, এখন কথাটা হোক, stay home and help others to stay home, to stay safe.
       অনেকে করতে শুরু করেছেন কাজটা। ব্যক্তিগতভাবে, সমষ্টিগতভাবে, ধর্মীয় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটা শুরু হয়েছে। এটা বড় আশার কথা। কতদিন কে পারব সে আলোচনা থাক এখন, আজ যে পারছি সেইটাই বড় কথা। আমার বেশ কিছু বন্ধুরা নিজেদের পাড়ায় কয়েকজন মিলিত হয়ে কাজটা করছেন। খুব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আসলে আমরা তো কেউ-ই জানি না আরো কতদিন এই রুদ্ধাবস্থা চলবে। তবে আন্দাজ করতে পারি খুব তাড়াতাড়ি এর হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই আমাদের। তাই আমার ভোগের আয়োজন কিছু কম করেও আরেকজনের বেঁচে থাকার অন্তত প্রাথমিক শর্তটা যেন বিপন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাটা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। বিপন্নতা দাবানলের মত। একদিকের সাম্য হারালে আরেকদিক স্থির থাকবে - এ দুরাশা। তাই এ কাজটা যতটা সম্ভব করতেই হবে। অন্য পথ নেই আর।