সৌরভ ভট্টাচার্য
7 December 2014
গ্রামের বাড়িতে ভোর হতেই কানে আসত গরুর গাড়ির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ। চোখ বুজে শুয়ে থাকতে থাকতে ভাবতাম ওদের ভয় করে না এত অন্ধকারে যেতে? একটা রোমাঞ্চ হত ভাবতে। কল্পনা করতাম খুব ঘন জঙ্গলের রাস্তায় গরুর গাড়িগুলো যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তার উপরে কিছু মানুষ। তাদের স্কুলে যেতে হয় না, পড়াশোনা করতে হয় না। যে কোনো সময়ে বাঘ আসতে পারে, ভুত আসতে পারে, আরো কত কি আসতে পারে! অথচ তারা নির্ভীক। এগিয়েই যাচ্ছে, এগিয়েই যাচ্ছে।এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের আলো ফুটত। ভয়, রোমাঞ্চ আলো ফোটার সাথে সাথেই মিলিয়ে যেতে শুরু করত। আবার নানান খেলায় মেতে উঠতাম সারাদিন। সন্ধ্যে নামলে গরুর গাড়িগুলো আবার ফিরতে শুরু করত। আমি হাঁ করে ওদের দেখতাম। আমার কাছে ওরা তখন হিরো। আমি শহরে বড় হয়েছি। সেখানে গরু বলতে খাটালই দেখেছি। খাটালের বাইরেও যে গরুদের এমন স্বাধীন জীবন থাকে দেখে অবাক হয়ে যেতাম। ভাবতাম কি মজা ওদের! আমাদের পাড়ার খাটালের গরুগুলোর মুখ মনে পড়ে খারাপ লাগত, আহা বেচারারা!
এখন গ্রামে গেলে গরুদের না, মানুষগুলোকে দেখে অবাক হই, বিস্মিত হই। মানুষের এত স্বাধীন, এত খোলামেলা, এত বেহিসাবী সময়!
মাথার মধ্যে একটা ঠান্ডা হাওয়া অনুভুত হয়। মনে হয় পুরোটা বাঁধা পড়িনি তো! তখনই বাসে ট্রেনে ঝুলন্ত মুখ, মিছিলের মুখ, টাইপরাইটারে, ফাইলের পাহাড়ে গোঁজা মুখ মনে পড়ে যাদের মধ্যে আমারও মুখ। ভাবি উন্নতির জন্য এ বলিদান তো দিতেই হবে। তবে কোথায় কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। কিন্তু দুদন্ড বসে যে ভাবব সে অবকাশ কোথায়? বল যে একটা একটা ড্রপ পড়েই যাচ্ছে, পড়েই যাচ্ছে। খাটালের গরুগুলোকে মনে পড়ছে - কারোর বাতানুকূল খাটাল তো কারোর দেহনুকূল, এই যা!