Skip to main content

        গায়ে একটা নীল রঙের পোশাক। বালিকা দৌড়ালো পাখির আওয়াজ শুনে। ঘন জঙ্গল পেরিয়ে ছুটছে সে, মাথার উপর নীল আকাশ। চারদিকে বৃষ্টিভেজা সবুজ বন। একটা নীল রঙা নদীর তীর ধরে বালিকা ছুটছে। যেন এক টুকরো নীলাকাশ এই ঘন বনের মধ্যে, সবুজের সাথে লুকোচুরি খেলছে। বালিকার পিছু পিছু একঝাঁক প্রজাপতি। কমলা, লাল, খয়েরি, হলুদ কত রকম রঙ তাদের। বালিকাকে ঘিরে ঘিরে উড়ছে তারা। যেন নাচছে। হঠাৎ একটা রামধনু উঠল আকাশে। দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকের আকাশে একটা অজগর সাপের মত থাকল শুয়ে। তার গা থেকে টুপ টুপ করে সাতটা রঙ বালিকার পথের সামনে পড়ছে বিন্দু বিন্দু। বালিকার পা পড়ছে ওই বিন্দুর উপর, তারপর তারা ছোট্টো ফুলের মত দুটো পায়ের ছাপে আঁকা হয়ে থাকছে পথের উপর। তার উপর বসছে প্রজাপতির দল, ডানা কাঁপাচ্ছে, আবার উড়ে পিছু নিচ্ছে বালিকার। আর বালিকা যে পাখিটার আওয়াজ শুনে দৌড়াচ্ছে সেই পাখিটা কি বলো তো? একটা নীলকন্ঠ পাখি। বালিকার বাড়ির পাশে যে আপেলের বাগান, সেই বাগানে সে থাকে। 
        দূরে পাহাড়ের চূড়োয় সাদা বরফ জমা। সকালে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে সেই চূড়া থেকে। যেন একটা আলোর নদী নামছে এই জঙ্গলের মধ্যে। বালিকার নীলবেশের চারদিকে সে একটা বলয় তৈরি করেছে। এমন বলয় দেখলে চোখ যায় ধাঁধিয়ে। 
        নীলকন্ঠ জঙ্গলে কোথায় গেল মিলিয়ে। বালিকা স্থির হয়ে দাঁড়ালো ঘন জঙ্গলের মধ্যে। কোথা থেকে আসছে ঘণ্টার ধ্বনি। একটা বাঘ, একটা হাতি আর একটা ময়ূর এসে দাঁড়ালো তাকে ঘিরে। বালিকা তার ছাগলটার কথা জিজ্ঞাসা করল তাদের। জানো তোমরা আমার ছাগলটা কোথায়? বালিকার কন্ঠে মনে হল রাণী মৌমাছির চাক, সেখানে মধু জমিয়েছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক মৌমাছি হাজার হাজার বছর ধরে। এত মধু বালিকার কন্ঠে। 
        ময়ূর বলল, তুমি পাখির সাথে জঙ্গলে এসেছিলে না? বালিকা বলল, হ্যাঁ তো। বাঘ বলল, তবে যে তুমি ছাগলের কথা বললে? বালিকা বলল, সে যে আমার আগেই এই বনে এসেছিল গো... গেল কই জানো তোমরা? তারা সমস্বরে বলে উঠল, না না না তো...
        বাঘ, হাতি, ময়ূর জঙ্গলে গেল মিলিয়ে। প্রজাপতিগুলোও একটা একটা করে গেল মিলিয়ে। রামধনু মিলিয়ে গিয়ে এলো একটা বিশাল কালো মেঘ, ঝড় উঠল তুমুল। বিদ্যুৎ চমকালো বালিকার নীলবেশ এফোঁড় ওফোঁড় করে। বালিকা জ্ঞান হারালো। তার কানে শুধু দেবালয়ের ঘন্টার ধ্বনি। তার সারা শরীর জুড়ে ঢুকছে ময়াল। 
        বালিকার শরীরটা তার নীলবেশের সাথে পড়ে রইল দেবালয়ের কোনায়। বালিকা দেবালয়ের বাইরে এসে দেখল কেউ কোত্থাও নেই। অনেক দূরে খুব চীৎকার শোনা যাচ্ছে কাদের। বালিকা মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকালো, কেউ নেই, মাটির কাছাকাছিও কেউ নেই। সে একা। তার আসার পথের সেই রামধনু চোঁয়া বিন্দুগুলোতে একটা একটা চারাগাছ জন্মিয়েছে। তার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির দল। ফুলের অপেক্ষায়। তারা তাকে দেখতে পাচ্ছে কই? পাবে কি করে? তার নীলবেশ আর কুঁড়ির মত শরীরটা যে দেবালয়ে পড়ে, পাপড়িগুলো ছড়িয়ে।

        বালিকা একা একা জঙ্গলে মিলিয়ে গেল। ময়াল সাপটা কাশ্মীরে শুয়ে, কন্যাকুমারী অবধি তার লেজ, যেতে যেতে বালিকা আড়চোখে দেখে গেল।