Skip to main content

(লেখাটির সাথে আমার পরিচিত জীবিত/ মৃত/অনাগত কোনো মানুষের মিল নেই।)

কারো কারো 'মানে' তৈরী করার ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকে দেখেছি। যেমন ধরুন আপনি বললেন, ভাবছি এই শীতে একটা গীজার কিনব। অমনি তিনি বলবেন, আমাদের আর সে ক্ষমতা কোথায় বলুন। (অথচ আর্থিক দিক দিয়ে তিনি হয়তো আপনার থেকে বেশি সক্ষম।)
আপনি বললেন, পাহাড় আমার খুব প্রিয়। অমনি তিনি বলবেন, তা আমার হাঁটুর যা অবস্থা আমি কি করে আর উঠব বলুন।
      আপনি বললেন, একটু অমুকের বাড়ি যাচ্ছি। অমনি তিনি বলবেন, তা আমাদের বাড়ি আর কেন আসবেন বলুন।
     এ তো গেলো কথা বলার ক্ষেত্রে। এরকমভাবে আপনার প্রতিটা আচরণের পিছনে আপনার গূঢ় উদ্দেশ্যের অর্থ ওনাদের অভিধানে করা আছে। যা শুনলে আপনি আকাশ থেকে পড়বেন, না আকাশে উড়ে যেতে চাইবেন তাই গুলিয়ে ফেলবেন।
     এরকম অজস্র উদাহরণ প্রতিদিন ঘটছে। বক্তা যা বলছেন, সেটাই যে তিনি বলতে চাইছেন- এটা এনারা স্বপ্নেও বিশ্বাস করতে চান না। কেন তা আমি বলতে পারব না। বুঝতে পারেন না, না বুঝতে চান না তেনারাই জানেন।
     একটা জোকস শুনেছিলাম অনেকদিন আগে। আপনাদের অনেকেরই জানা। এক ঠাকুরদা মাস তিনেক ধরে নাতি-নাতনীকে মহাভারত পড়ে শোনালেন। তারপর তাদের নীতিশিক্ষা কি প্রকার পোক্ত হয়েছে বোঝার জন্য প্রথমে নাতনীকে জিজ্ঞাসা করলেন, দিদিভাই তুমি কি শিখলে তা হলে?
     নাতনী বলল, দাদু এই বুঝলাম যে, প্রয়োজনে পাঁচজন স্বামীও রাখা যেতে পারে।
     দাদুর চক্ষু ছানাবড়া। তিনি নাতির দিকে ফিরে বললেন, আর তুমি কি শিখলে দাদুভাই?
     নাতি উত্তর দিল, প্রয়োজনে এক সূচাগ্র জমির জন্যও ভাইয়ের সাথে লড়া যায়।
     এরপর দাদুটি নাকি কাশীবাসী হয়েছিলেন গল্পকারের মতে।
     তো এই হল কথা। বলা আপনার হাতে, কিন্তু তার যে কে কি অর্থ করবেন তা আপনার হাতে নেই। তবে যাঁরা সব বিষয়েই নিজেকে জড়িয়ে পেঁচিয়ে অর্থ করেন, তাঁদের থেকে বাঁচার দু'একটা টিপসঃ

১) অবজেক্টিভ কথা বলুন। পাহাড়ে যাচ্ছি বলুন। পাহাড় ভাল লাগে বলবেন না। তাও তিনি প্যাঁচাবেন, তবে প্যাঁচটা খোলতাই হবে না অত।
২) ওনাদের কথার প্যাঁচে পড়বেন না। যা বলছেন শুনে যান নির্বিকার মুখভঙ্গীতে। কারণ আপনার বিরক্তিতে উনি আনন্দ পাবেন, আরো কথা বাড়াবেন।
৩) যদি কথার উত্তর দিতে শুরু করেছেন তা হলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গুলিয়ে ফেলবেন কি দিয়ে কথা শুরু হয়েছিল। এদের কথার গলি বেণারসের গলির চেয়েও জটিল। শুরু করেছিলেন হয়তো পাতের আগে শুক্ত খাওয়া ভাল, কি ভাল না দিয়ে, কিছুক্ষণ পরেই হয়তো দেখলেন আপনি ওনার বাড়ির কাজের লোকের মাসির গতবারের পূজোয় কেনা, কাটা কাপড়ের উপাখ্যানে চলে গেছেন, যে শাড়িটা হয়তো ঘটনাচক্রে আপনি কিনে দিয়েছিলেন, এবং তারই ইচ্ছামত।
৪) যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখুন। কথাবার্তা মিনিট দুয়েকের বেশি কদাপি না।
এরপর আপনার কপাল। দেখুন চেষ্টা করে। আর এমন মানুষ যদি বাড়ির লোক হন, তো ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরেরও অসাধ্য আপনাকে শান্তিতে রাখা। যতক্ষণ না আপনার গন্ডারের চামড়া হয়।