একজন বলল, আয়না সত্য। আরেকজন বলল আয়নায় ভাসা যা কিছুর সবের ছায়া তারাই সত্য। নইলে তোমার আয়না কেবল কাঁচ। প্রতিবিম্ব দেখলেই যে না আয়না!
আরেকজন এসে বলল, আয়না সত্য, প্রতিবিম্ব সত্য, দুই-ই সত্য, তবে যে আয়না আর প্রতিবিম্ব দুই-ই দেখছে সে মূল সত্য।
তিন দলের লোক হল। একজন হল আয়নাবাদী। একজন হল প্রতিবিম্ববাদী। একজন হল দ্রষ্টাবাদী।
মাঝে মাঝেই এদের মধ্যে গোলমাল হয়। কে হল মূল, এই নিয়ে খুব সমস্যা হয়। একে অন্যকে সরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেই যেন সব হয়ে গেল।
এই সব লড়াই দেখে একজন এসে বলল, আয়না সত্য, প্রতিবিম্ব সত্য, দ্রষ্টা সত্য, লড়াই সত্য। যে লড়ছে সে হল অহংকার। সে আয়না নয়, প্রতিবিম্ব নয়, দ্রষ্টা নয়। কিন্তু সে নিজেকে আয়না ভাবে, প্রতিবিম্ব ভাবে, দ্রষ্টা ভাবে। এবং নিজের ভাবাকেই শেষ কথা ভাবে। এই বলে সে হল অহংবাদী।
তবে কি হল, আয়নাবাদী, প্রতিবিম্ববাদী, দ্রষ্টাবাদী, অহংবাদী।
তবু কি লড়াই থামল? থামলই না। এই সব দেখেশুনে উদাসীন এসে বলল, আয়না যাক, প্রতিবিম্ব যাক, দ্রষ্টা যাক, অহং যাক।
সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি তবে কে হে?
সে বলল, আমি শূন্যবাদী।
আরেকজন এসে বলল, কেন যাবে সব? সব থাকবে। আয়না থাকবে, প্রতিবিম্ব থাকবে, দ্রষ্টা থাকবে, অহং থাকবে, সবকে নিয়ে মালা গেঁথে হবে লীলাখেলা….
সবাই বলল, তুমি কে হে?
সে বলল, আমি হলাম গিয়ে লীলাবাদী।
তবে গিয়ে খতিয়ে দেখলে হল, আয়নাবাদী, প্রতিবিম্ববাদী, দ্রষ্টাবাদী, অহংবাদী, শূন্যবাদী আর লীলাবাদী।
সূর্যকে ঘিরে জগত ঘুরেই চলল। 'আমি' ঘিরে নানাবিধ প্রবৃত্তি থেকে শুরু করে যুক্তি, অস্তিত্বের তাঁত বুনেই চলল।
একজন এসে বলল, কেউ তো বলল না, 'আমি' বোধ আছে বলেই সব আছে - আয়না আছে, প্রতিবিম্ব আছে, দ্রষ্টা আছে, অহং আছে, শূন্যকে জানার জ্ঞান আছে, লীলাকে চাখার বোধ আছে। সবই তো 'আমি' গো।
সবাই বলল, তুমি তবে কে?
সে বলল আমি হলাম, অস্তিত্ববাদী।
এই সব দেখে ক্ষ্যাপা উঠল আরো ক্ষেপে, সে তার একতারা উঁচিয়ে বলল, ওরে একি বিভীষিকা দেখি…. কেউ বলছে না কেন আমি তবে মানুষবাদী….
সবাই একসঙ্গে উচ্চস্বরে বলল, সেও হয়... সেও হয়…
মীমাংসা হল না। জগত জোড়া শুধুই এখন বাদীই বাদী।
আয়নাবাদী, প্রতিবিম্ববাদী, দ্রষ্টাবাদী, অহংবাদী, শূন্যবাদী, লীলাবাদী, অস্তিত্ববাদী, মানবতাবাদী। এ ওকে বলে তুই আমার দলের, সে তাকে বলে তুই আমার দলের। এ নিয়ে লড়াই তো লেগেই চলে। ঠাণ্ডা লড়াই থেকে গরম লড়াই, আবার গরম লড়াই থেকে ঠাণ্ডা লড়াই।
ওরাও মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, হ্যাঁ গা, এ ঝামেলা কি থামবে না?
একজন বলে, থামবে থামবে, সব থামবে...…. এই বলে সে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে….
তার নাম লোকে দিল পলায়নবাদী….