অনেক মিথ্যা, অনেক ছলনা, অনেক প্রবঞ্চনার মুখোমুখি হওয়ার পর ধীরে ধীরে বোধ যখন পাকাপোক্ত হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন কি অনায়াসে বলে ওঠে, "বাব্বা, এই নিয়ে এত!"
এই যে শব্দবন্ধটা, "বাব্বা, এই নিয়ে এত!", এর চাইতে সুখাসন আর হয় না। তরকারিতে নুন হয়নি, কি নুনে পোড়া, সময়ে কেউ এসে দাঁড়ালো না, কি আসবে বলে এলো না, কি স্টেশানে গিয়ে ট্রেন ক্যান্সেল হল…. ইত্যাদি ইত্যাদি। যতই মন বিগড়াক, বিজ্ঞ মনের কত্তাবাবা বলে, বাব্বা, এই নিয়ে এত!
চুলে পাক ধরে। বিস্ময় নিয়ে বিস্ময় ফুরায়। কিছুতেই জীবনে নিশ্চিত হওয়ার জো নেই, বেশ বোঝে। আস্তিক বলে, লীলা। নাস্তিক বলে, ভাগ্য। মোদ্দা কথা দাঁত না কেলিয়ে সহ্য করে যাও। গায়ে মেখো না। আর যাই হোক জীবনে কিছু নিয়ে বায়াসড হলাম না, ফ্যানাটিক হলাম না, বিগট হলাম না…. এর থেকে শান্তি আর কিসে! বাকি যা জানি সে হল, যে কোনো সময়ে যা কিছু হতে পারে, কারোর আটকানোর সাধ্যি নেই। মহামারী হোক, কি যুদ্ধু, ভুল জায়গায় ফোঁড়া, সোজা রাস্তায় হোঁচট। হবেই হবে।
একদিন কান পেতে শুনলে হয় তো দেখা যাবে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড উদাসীনের মত বলছে, বাব্বা, এই নিয়ে এত! কত গ্যালাক্সি চুরমার হয়ে গেল, উনি এসেছেন আমায় ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব শুনাতে। যা ভাগ!
না না, এর মানে হিমালয়ে সেঁধুবার অবস্থা হয়েছে তা মোটেও নয় কিন্তু, আসলে পাকাপোক্ত মন হয়েছে। রামকৃষ্ণ ঠাকুর বিদ্যাসাগরকে বলছেন, তুমি সিদ্ধ হয়েছ। বিদ্যাসাগর বলছেন, কি করে বুঝলেন? ঠাকুর বলছেন, নরম হয়েছ যে! বিদ্যাসাগর ফচকেমি করে বলছেন, কিন্তু কলাই বাটা তো সিদ্ধ হলে শক্ত হয় যে! রামকৃষ্ণদেব বলছেন, তুমি তা নও গো, শুধু পণ্ডিতগুলো দরকচা পড়া। না এদিক, না ওদিক। শকুনি খুব উঁচুতে উঠে, তার নজর ভাগাড়ে…. ইত্যাদি ইত্যাদি। বিদ্যাসাগর চুপ করে শুনছেন।
আমরাও চুপ করে শুনি। কার কথা? নিজের কথা। যখন চারদিক নিঝুম হয়ে যায়। নিজের কাছে নিজের কথা কি? শান্তি, শান্তি, শান্তি।
(ছবি: Debasish Bose )