ঈশ্বরের সৃষ্টির শেষ দিন। সব ঠিকই চলছিল। হঠাৎ কি করে প্রভুর অন্যমনস্কতার সুযোগে সৃষ্টি হল এক পাগলের।
সবাই যে যার পাওনা-গন্ডা বুঝে বিদায় নিল কিন্তু পাগল আর যেতে চায় না। তার নজর পড়ল প্রভুর বাঁশির দিকে। তার ওটাই চাই। প্রভু যত বোঝান তার তত জেদ চাপে। যত লুকোন, তার পাগলামি যায় তত বেড়ে। শেষে প্রভু তাকে তাঁর সভাসদদের হাতে সঁপে - গেলেন বিশ্রামাগারে। বলে গেলেন, তোমরা বোঝাও, আমি আসছি।
গন্ধর্ব-দেব-ঋষি মিলে ঘিরে বসল পাগলকে – বোঝাবে। পাগল সকলের দিকে চায় আর মিটিমিটি হাসে।
গন্ধর্ব বললে, “তুমি বাঁশি নিয়ে কি করবে? সুরের কি বোঝ তুমি?”
পাগল ভারী অবাক হয়ে একগাল হেসে বললে, “সুরই তো বুঝি, দেখি, শুনি! চারিদিকে তো শুধু সুরই গো! অবশ্য সব সুর মিষ্টি না। তবু সুর তো! আমার বাঁশিই চাই। গন্ধর্ব চুপ করলে।”
দেবগণ বললেন, “তাল বোঝ?”
সে বললে, “সে আর বুঝি না - বর্ষার তাল, বসন্তের তাল, আনন্দের তাল, বিষাদের তাল - সব বুঝি। আমার বাঁশি চাই।“ দেবগণ রইল নির্বাক হয়ে।
ঋষি বলল, “সে না হয় হল। তুমি সামলাতে পারবে বাঁশিকে? এ যে স্বয়ং প্রভুর বাঁশি!”
পাগল বলল, “কি যে বলেন পাগলের মত! আমি কেন বাঁশি সামলাব? সেই তো আমায় সামলাবে, পথ দেখাবে, কাঁদাবে, হাসাবে! ঋষি বললেন, থাক থাক – বুঝেছি।”
অবশেষে প্রভু আসলেন প্রহর তিনেক পর। সকলে নির্বাক, নতমুখে। এক পাগল ছাড়া।
প্রভু বসলেন সিংহাসনে, পাগল বসল পায়ের কাছে। প্রভু বললেন, “বাঁশিই চাই?”
সে বললে, “হাঁ।”
প্রভু এটা ওটা অনেক কিছু দিতে চাইলেন আবার।
পাগল শুধু মাথা নাড়ে আর বলে, “না-না-না-“
শেষে প্রভু পাগলকে বললেন, “তবে তোমায় যদি অমরত্বের দিই অধিকার?”
পাগল ত্রিভুবন কাঁপিয়ে হেসে উঠল। বললে, “ঈশ্বর হয়ে মিছে কথা কও কেন? তোমার চিরনবীনতাও তো ঐ বাঁশির-ই গুণে।“
প্রভুর মুখের ভাব গেল বদলে। দুটি চোখের কোণে দেখা দিল দুফোঁটা জল। মুখে মৃদু হাসি। বললেন, “কাল এস।”
পরের দিন সূর্য উঠল। পাখি ডাকল। গন্ধর্ব, দেব, ঋষি - সবাই জাগল। কিন্তু এ কী! প্রভুও নেই, পাগলও নেই!
সেদিন থেকে প্রভু অরূপ হয়ে থাকলেন পাগলের বাঁশির সুরে অমর হয়ে।