Skip to main content

- বাঁশিটা দেবে?

- নাও

- তুমি বাঁচবে কি নিয়ে?

- সুর

- বাঁশি ছাড়া সুর উঠবে কোথায়? তুমি তো বোবা!

- প্রাণে।

- বাজাবে কিসে? গাইবে কিসে?

- প্রাণে

 

বাঁশিওয়ালার কাছে বাঁশিটা সত্যিই বিক্রি করে দিল সে। সেই পয়সায় মেয়েটার জন্য নতুন জামা কিনে আনল। সস্তা, ভীষণ সস্তা, কিন্তু নতুন।

পরের দিন সকালে উঠে নদীর ধারে গিয়ে বসল। তার বাঁশি নেই। কণ্ঠ নেই। প্রাণে ঢেউ লাগছে সুরের। কি করে সে? বাঁশি বাজিয়ে ভিক্ষা করেই তো দিন চলত তার।

একটা হোটেলে বাসন মাজার কাজ পেলো। রাতে বাসন মাজা শেষ করে সবাই যখন ঘুমায় সে হোটেলের টেবিলে তাল দেয়। চোখে জল ভরে আসে।

মালিক বলল, তুমি কি গান গাও?

সে মাথা নাড়ল। বলল ইশারায় আমি জন্ম বোবা নই। রোগে বোবা। আগে গাইতাম গান। পরে বাজালাম বাঁশি, যখন গলা গেল। মেয়েটার নতুন জামা কিনতে গেল বাঁশিও। তাই এখন প্রাণে জাগে সুর। হাতে দিই তাল।

মালিক বলল, বেশ। আমি দেখি যদি পাই সস্তায় কোনো বাঁশি।

সে তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে বলল, না না। ও দেবে। দরকার বুঝলে।

ইশারা করল দেওয়ালে। টাঙানো ছবি। ঠাকুরের। হাতে বাঁশি।

একদিন এক বাঁশিওয়ালা এলো দোকানে। ভাত খেল। বাঁশির ঝোলা থেকে বাঁশি বার করে দেওয়ালে হেলান দিয়ে লাগল বাজাতে।

সে এসে বসল সামনে। তাল দিল। সুর উঠল জমে। দোকানের বাইরে লোক গেল দাঁড়িয়ে। মালিকের চোখে জল। কে এ?

বাঁশির সুর থামল। লোকে অনেক টাকা দিয়ে গেল। মালিক সব দিয়ে তাকে বলল, নাও, কিনে নিও নতুন বাঁশি। সে ইশারায় বলল, না। বাঁশিওয়ালাকে বলল, নাও। বাঁশিওয়ালা বলল, তবে তুমি নাও আমার থেকে একটা বাঁশি!

সে নিল না। বলল তিনি যখন বুঝবেন, দেবেন।

লোকটা কাজ করতে করতে বুড়ো হল। মালিকও হল বুড়ো। তার যাওয়ার সময় এলো ঘনিয়ে। মালিক বসল শিয়রে। বলল, হ্যাঁ গো, সে তো দিল না বাঁশি!

সে হাসল। ইশারায় বলল, দিয়েছে, প্রাণে। আমায় করেছেন বাঁশি। তিনি বাজিয়েছেন সুখে দুঃখে। আমি শুধু দিয়ে গেছি তাল। আজ বাঁশি ভাঙার সময় হল। আমি আসি। মনে রেখো তাঁর দেওয়া নেওয়ার হিসাবে ভুল হয় না। আমরাই তাল কেটে ফেলি। সুর যায় এগিয়ে। আমরা যাই পেছিয়ে।