লালটু মিত্র ওরফে বুকাই, কালো হাফপ্যাণ্ট আর সবুজ টিশার্ট পরে ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে। গ্রাউণ্ডফ্লোরে ফ্ল্যাট। বাবা মা ঠাম্মিকে প্রণাম করতে ওল্ডেজ হোমে গেছে। সেও যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আজ তার ক্যারাটে ক্লাস আছে। জামাপ্যাণ্ট থেকে নতুন নতুন গন্ধ আসছে, যেন আজ ষষ্ঠী। কিন্তু না, আজ একলা বৈশাখ।
একলা বৈশাখ মানে কি সে
থ্রিতে উঠে গেল, তাও বুঝতে পারল না। বাড়িতে তন্নতন্ন করে বাংলা ক্যালেন্ডার
খুঁজেছে। নেই। সবাই তাও কি করে বুঝে যায় যে আজ একলা বৈশাখ? নাকি যে কোনো
একটা দিন গরম পড়লেই বলে দেয় আজ একলা বৈশাখ? তার কোনো বন্ধুদের
বাড়িতেও নেই। এমনকি স্কুলেও….ধুর স্কুলে তো বাংলা
বললেই মিসেরা পানিশমেন্ট দেয়, সেখানে বাংলা ক্যালেন্ডার
কি করে থাকবে?
একবার সে হ্যাপি বাংলা
নিউ ইয়ার বলে ফেলেছিল বলে অ্যাবাকাসের মিস মাথায় গাঁট্টা মেরে বলেছিল, ওটা শুভো নববড়সো
হবে।
মানে কি? যেন টেগোরের কোনো
পোয়েট্রি… হাসি পেয়েছিল তার।
এর চাইতে আসল নিউ ইয়ারটা
কত ভালো। শীতকাল থাকে। কত ঘোরা যায়। মা একবার দক্ষিণেশ্বর কালী টেম্পলে নিয়ে
গিয়েছিল। কি ডার্টি বাবা রে বাবা! চারদিকে ফুল পড়ে, কি নয়েজ। বুকাইয়ের চার্চ
ভালো লাগে। কি সুন্দর পরিষ্কার। সবাই কত জেণ্টল। কেন যে সে বাঙালি হল? এখানে থাকবে না
সে। বড় হলেই কাকার মত কানাডায় চলে যাবে। বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে কাকা। ছবি পাঠায়।
বাবার মন খারাপ লাগে। জেলাস লাগে। বেশি করে ড্রিংক্স করে। কাকা কিভাবে বাবাকে
ডিপ্রাইভ করে, এক্সপ্লয়েট করে বাইরে গেছে সেই গল্প বলে। তার মুখস্থ হয়ে
গেছে। মা কন্সোল করে বাবাকে। বুকাইয়ের হাসি পায়। কাকা ইজ মোর ক্লেভার দ্যান বাবা।
বাবা ইজ এ লুজার। বুকাই জেনে গেছে এটা। তার রোল মডেল কাকা। কাকার মেয়েটা কখনও
বাংলা বলে না। সে আজ জানেই না কি, শুভো নববড়সো… না কি সব ননসেন্স….
মা ফোন করল। ঠাম্মির ওখান
থেকে বাবার কি একটা কাজে বেহালা যাবে। সে যেন রুমঝুম আন্টির কাছে খেয়ে নেয়। রুমঝুম
আন্টি পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। একা।
বুকাই ক্যারাটে ক্লাস করে
রুমঝুম আণ্টির ফ্ল্যাটে এলো। আন্টি বলল, তুমি স্নান করে এসেছ?
আন্টি গান শেখায়। স্কুলে
পড়ায়। টেগরস সং গায়। কি একটা গান চলছে। সো বোরিং। তার ইংলিশ স্যার বলে, টেগোরস নোবেল
ওয়াজ আ কনসোলেশান প্রাইজ টু এশিয়ান… দে আর বিগ হার্টেড.. তাই দিয়েছে। বুকাইয়েরও
তাই মনে হয়।
আন্টি চিকেন কারি আর
ফ্রায়েড রাইস দিল। আর পায়েস। দারুণ রাঁধে আন্টি। ইয়াম্মি।
আন্টি বলল, বুকাই তুমি কোনো
বাংলা গান জানো?
বুকাই বলল, হ্যাঁ? টুম্পাসোনা, কাঁচাবাদাম….
আন্টি হাসতে হাসতে বিষম
খেয়ে ফেলল। বলল, আরে না না… যেমন ধরো কোনো
রবীন্দ্রসংগীত.. মানে টেগোরস সং…
না।
শিখবে?
বুকাইয়ের আন্টির
সিন্থেসাইজারটার উপর খুব লোভ। সে জিজ্ঞাসা করল ওইটা বাজিয়ে শেখাবে?
আন্টি বলল, হ্যাঁ তো। খাটে
রাখা সিন্থেসাইজারটা খোলা। বুকাইয়ের মনটা আনন্দে নেচে উঠল।
আন্টি আর সে গান শিখতে
বসল। পিয়ানো মোড করে নিল আন্টি। গাইছে, ফুলে ফুলে ঢোলে… ঢোলে… বহে কি বা
মৃদুবায়….
ম্ড়িদুবায়? না মৃদুবায়? মানে কি?
আন্টি বোঝালো। এটা
ওয়েস্টার্ন সুর। টেগোর ওয়াজ রিয়েলি আ কপিক্যাট।
গানটা ডাজন্ট মেক্স এনি
সেন্স… সো স্টুপিড লিরিক্স….
আন্টি বুঝল তার ভালো
লাগছে না। আন্টি তাকে বলল, চলো তোমায় একটা গল্প পড়ে
শোনাই।
আন্টি বই আনল একটা।
বাংলায় কি লেখা, বুকাই বাংলা পড়তে পারে না।
গল্পটার নাম নাকি হযবরল।
রিটেন বাই ফাদার অব সত্যজিৎ রে….
গল্পটা ভালো। বাট নট
অ্যাজ মাচ ইন্টেরেস্টিং অ্যাজ হ্যারি পটার।
বুকাই অঙ্ক করতে হবে বলে
নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলো। তার ভীষণ বোরিং সাফোকেটেড লাগছে। এখান থেকে তাকে চলে
যেতেই হবে। সে বাবার মত লুজার কিছুতেই হবে না… কিছুতেই না। কাকাকে ফোন
করল… বোন ফোন ধরল….
হাই ডুডস….
কত কথা হল। অফকোর্স ইন
ইংলিশ। ওকে জিজ্ঞাসা করল, তুই নববড়সো মানে জানিস….
সে রেগে বলল, ওফ স্পিক ইন
ইংলিশ ব্রো… ইজ ইট আ টাইপ অব ফিশ?....
দু’জনেই হেসে লুটিয়ে পড়ল।
মা ফোন করে বলল, তুমি কি খাবে আজ
ডিনারে?
বুকাই বলল, চাইনিজ। ঠাম্মি
কেমন আছে মা?
ওহ সরি বাবা… আমরা আজ মিস করে
গেছি, বাবা ভীষণ আপসেট ছিল বলে আজ মেহেরা আঙ্কেলের বাড়ি গিয়েছিলাম… একটা পার্টি ছিল… বাট শি ইজ ওকে আই
হোপ….
বাবা কি তবে আজকেও ফুল
লোড….
হ্যাঁ… ঘুমিয়ে পড়েছে…. আমরা আসছি…
বুকাই বলল, মা…
মা বলল, কি?
বাবা কি হিজবিজবিজ?
মা বলল, তুমি ওসব ননসেন্স
কোত্থেকে শুনছ?
বুকাই হেসে বলল, আই নো মা… রিল্যাক্স… কাম সুন… নববড়সো শো অফ ইজ
ওভার…